রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইউয়ানে ঋণ দেবে চীন

ইআরডিতে চিঠি পাঠিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক

শাহেদ আলী ইরশাদ

ইউয়ানে ঋণ দেবে চীন

চীনা সরকারি অর্থায়নে দেশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে (চীনা মুদ্রা) অর্থায়ন করতে চায় চীনা এক্সিম ব্যাংক। ডলারের একচ্ছত্র আধিপাত্য রোধে সম্প্রতি বাংলাদেশকে এই প্রস্তাব দিয়েছে অর্থায়নকারী ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউয়ানে এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সাশ্রয়ী হবে।

সম্প্রতি এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংক অব চীনের উপ-মহাব্যবস্থাপক লি কিনজি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় ও বিনিময় হার চীন-বাংলাদেশের জন্য অধিক ঝুঁকি বহন করছে। ডলার ঘাটতি দুই দেশের সহযোগিতার জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় ডলারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় চীনা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর সুদের হার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও মনে করছে চীনের বৃহৎ ঋণদাতা ব্যাংকটি। লি কিনজি বলেছেন, স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা বৈদেশিক অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর জন্য ইউয়ানে ক্রস বর্ডার সেটেলমেন্ট এবং অর্থায়নের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাধান দেয়। কারণ আন্তর্জাতিক সম্পদ মজুদের (এসডিআর) অন্তর্ভুক্ত ব্যাংক অব চায়না রেনমিনবির (ইউয়ান)। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থিতিশীল মুদ্রাগুলোর তালিকায় রয়েছে ইউয়ান। ইউয়ান ব্যবহার করা হলে ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামা এবং সুদহারের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। ডলার ঘাটতির চাপ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের চীনা ঠিকাদাররা সাধারণ ভাবেই ইউয়ানে লেনদেন করতে বেশি পছন্দ করেন। ইউয়ানে অর্থায়ন হলে বিনিময় হারের খরচ কমবে যা প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে আনবে। এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংক অব চীনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মনে করেন দুই পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নও সফল হবে। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার প্রকল্প তালিকা অনুসারে, চীনা সরকারি অর্থায়নের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। চীন সম্প্রতি ক্রস-বর্ডার ইন্টার-ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম (সিআইপিএস) নামে একটি বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করছে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার ফলে ডলারের তীব্র ঘাটতি তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোকে ডলারের পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ইউয়ানে লেনদেন করার অনুমতি দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো ঋণপত্রের (এলসি) ক্ষেত্রে এবং ব্যাংকের বিদেশি শাখার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লেনদেনের সুবিধার্থে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকার ২০১৪ সালের মার্চে একটি প্রজ্ঞাপনে ইউয়ানকে রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাণিজ্য ও ব্যাংক উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহারে এগিয়ে এলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি করতে একক বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। সাশ্রয়ী হবে বাণিজ্য। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি আয়ের বেশির ভাগই আসে ডলারে। ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের লাভ করার সুযোগ থাকতে পারে। বাংলাদেশ বছরে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে চীনে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ওই সফরে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, যোগাযোগ অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত ২৭টি প্রকল্পে চীন ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত চীনের প্রকল্পগুলোর মধ্যে আটটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ৭৮০ কোটি ডলার হলেও এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। অর্থাৎ চীন প্রতিশ্রুত অর্থের মাত্র ১৪ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। আর ২৭ প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর