রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎহীন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সংকট গ্যাসের

জিন্নাতুন নূর

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত শুক্রবার রাত থেকে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। এর আগে জ্বালানি সংকটে ঢাকার বাইরের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহালেও গতকাল দিনে-রাতে তীব্র লোডশেডিংয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েন ঢাকাবাসীও। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানা যায়, কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় গতকাল সকাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব চলাকালীন এবং এর পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত সময়ে ১০টির অধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে তিতাস গ্যাসের অধিভুক্ত এলাকাগুলোতেও গ্যাসের চাপ কম থাকবে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার রাত ১২টায় সারা দেশে ১ হাজার ২৫৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। যা বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ভোর ৫টার দিকে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫ মেগাওয়াট। পিজিসিবি সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব না যাওয়া পর্যন্ত সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় লোডশেডিং করতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের এই প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত ১৬ হাজার থেকে থেকে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। ঢাকার বাইরে তীব্র লোডশেডিং হচ্ছিল। এবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঢাকাতেও লোডশেডিং বৃদ্ধি পেল। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল ভোর থেকে দফায় দফায় লোডশেডিং শুরু হয়। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে তা ঘণ্টাখানেকের আগে ফেরে না। এই অবস্থায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চান।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, গ্যাস সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট। এ সময় ১ হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। আর বিকালে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট কিন্তু গ্যাসের অভাবে ৪ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে ১৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে।

পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ পরিদফতর) মো. শামীম হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলে আগামী ১৭ মের পরেও লোডশেডিং হতে পারে। আর ক্ষয়ক্ষতি কম হলে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সাগর শান্ত হলে এলএনজি টার্মিনাল থেকেও পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোখার প্রভাবে গত ১২ মে রাত ১১টা থেকে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়ায় টার্মিনাল দুটি দ্রুত পুনস্থাপন করে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। একই কারণে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অতিদ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে। একই সঙ্গে তিনি এ সময় বৈদ্যুতিক ছেঁড়া তার স্পর্শ না করে কাছের বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করার জন্য গ্রাহকদের প্রতি অনুরোধ করেন।

ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা দুই সংস্থার মধ্যে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) কর্তৃপক্ষ জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাদের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি ছিল প্রায় সাড়ে ৩০০ মেগাওয়াট। আর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াটের। এর কারণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গতকাল দিনে-রাতে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং করা হয়। পিডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, মোখা যখন বাংলাদেশে আঘাত করবে তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতে পারে। বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। এতে বৈদ্যুতিক লাইনে ডালপালাসহ গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটে। বৈদ্যুতিক লাইন ও পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটি। এ সময় গাছ সরানোসহ যান্ত্রিক ত্রুটি সরাতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়।

স্বল্পচাপ থাকবে তিতাস অধিভুক্ত এলাকাতেও : তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করবে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই স্বল্প চাপ থাকবে। এ জন্য রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ এলাকায় গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা হবে।

 

সর্বশেষ খবর