সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিল্প খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট

শাহেদ আলী ইরশাদ

শিল্প খাতে দক্ষ কর্মীর সংকট

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ৮০ শতাংশেরও বেশি জনশক্তি মনে করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আর সার্বিকভাবে দেশের শিল্প খাতে কাজ করা কর্মীদের অর্ধেকেরই খাত-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা নেই। শিল্পের চাহিদার সঙ্গে পাঠ্যক্রমের মিল না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা শিল্পের উৎপাদন যেমন কমিয়ে দিচ্ছে তেমনিই তৈরি করছে বেতনবৈষম্য। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বিআইডিএস ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের চারটি অঞ্চলের ৭২টি নিট এবং ৪৭টি ওভেন শিল্পসহ ১১৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকরা মনে করেন, আরও প্রশিক্ষণ তাদের দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ওভেন পোশাক শিল্পের ৮২ শতাংশ পুরুষ এবং ৮৪ শতাংশ নারী। এ ছাড়া নিট শিল্প-কারখানার ৮৪ শতাংশ পুরুষ ও ৮৮ শতাংশ নারী জরিপে মতামত দিয়েছেন। গবেষণায় বলা হয়েছে, অন্যান্য শিল্পের তুলনায় জনবলের ঘাটতি কম থাকলেও তৈরি পোশাক খাতের সব বিভাগের কর্মীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব রয়েছে। ওভেন এবং নিট পোশাক খাতে মাত্র কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর ও মেশিন অপারেটরদের চাহিদামতো শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, এ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচির প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে শিল্প-কারখানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। যাতে প্রশিক্ষণার্থীরা ওই সব কারখানায় ইন্টার্নশিপ করতে পারেন। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোমানের কর্মী পায়। সরকারের উচিত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, কারিগরি প্রকৌশল এবং ডিজাইন কাজের প্রশিক্ষণ চালু করা। যাতে পোশাকশিল্প খাত পণ্য বহুমুখীকরণে কাজ করতে পারে এবং উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে পারে। শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, একই সমস্যায় আছে দেশের সব শিল্প খাত। দেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর একটি হালকা প্রকৌশল খাত। এ খাতের ২ হাজারের বেশি শ্রমিকের ওপর গবেষণা চালিয়ে বিআইডিএস বলছে, এখানে কর্মরত ৬০ ভাগেরই প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো দক্ষতা নেই। আর ১৫ শতাংশ কর্মী যে পদে কাজ করছেন তার চেয়ে বেশি দক্ষ। গবেষণার ফলাফলে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার মিল না থাকায় উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গবেষণা বলছে, চামড়া খাতে কর্মরতদের ৬০ ভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রাথমিক স্তরের। ফলে এ খাতের ২ শতাংশ পদ সারা বছরই খালি থাকে। কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতে কর্মরতদের ৪২ শতাংশের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। গবেষকরা বলছেন, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে দক্ষতার অভাব নেই, দক্ষতার গ্যাপ আছে। এ খাতের কর্মীরা জানিয়েছেন, পাঠ্যপুস্তকে কৃষি খাতের প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। গবেষকরা জানান, আগামী ১০ বছরে চামড়াসহ সব খাতে আরও ৫০ শতাংশ শ্রমিকের চাহিদা তৈরি হবে। শিল্পের মান ও বিশেষ প্রশিক্ষণের সুপারিশ করা হয় গবেষণায়। সরকারের সর্বশেষ শ্রমিক শক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশের শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজ করছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে যে প্রণোদনা দেওয়া হবে সেখানে শ্রমিকের চাহিদা, সরবরাহের যে মিসম্যাচ সেটা পূরণ করে প্রণোদনা পাওয়ার শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে।

সর্বশেষ খবর