শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংসদ নির্বাচনে নতুনভাবে সাজানো হবে ভোট কেন্দ্র

কমিটির নেতৃত্বে ডিসি এসপি ইউএনও-ওসি

গোলাম রাব্বানী

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন করে সাজানো হচ্ছে ভোট কেন্দ্র। এক্ষেত্রে অনেক ভোট কেন্দ্রের স্থাপনা পুরাতন বা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আশপাশের নতুন স্থাপনায় এবার সম্পূর্ণ নতুন করে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে; এ জন্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা কমবে। তবে সংসদ নির্বাচনে নতুন ভোট কেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষমতা পাচ্ছেন ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিরা। তারা ভোট কেন্দ্রের খসড়া তৈরির কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন। এ জন্য নতুন ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নতুন কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিষয় আমলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ভোট প্রদানের সুবিধাদি বিবেচনায় নতুন স্থাপনায় ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। গত নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোট কেন্দ্রগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হলে বা পর্যাপ্ত কক্ষ, যাতায়াতের সুবিধা না থাকলে অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত স্থাপনা ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করতে হবে। গত জাতীয় নির্বাচনে যেসব প্রতিষ্ঠান ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকলে এগুলো ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা ভালো হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসির বৈঠকে সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। কমিটি ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা করবে। এটি চূড়ান্ত করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এখন যেসব স্থাপনা ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়; তার অনেকগুলো পুরাতন বা নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশে নতুন স্থাপনা হয়েছে। তাই সম্পূর্ণ নতুন করে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা কমতে পারে। এদিকে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালায় ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিদের রাখায় ইসির কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনের কেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা করেন। কিন্তু এবারের নীতিমালায় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের যুক্ত করায় নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সৃষ্টি হবে। যদিও নতুন নীতিমালায় কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, শিক্ষা কর্মকর্তারা তাদের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অবস্থা, কক্ষের সংখ্যা, যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত থাকেন। অন্যদিকে পুলিশ সুপার, থানার ওসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনার যাতায়াত ব্যবস্থা ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নানা কার্যক্রমে মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের কাজ অধিকতর সহজ ও সুষ্ঠু হবে। ইসির নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোথায় কোথায় ভোট কেন্দ্র হবে তার খসড়া তালিকা তৈরির জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক করে একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন হবে। জেলা পর্যায়ে থাকবে ডিসির নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি। ইউএনওর নেতৃত্বে উপজেলা/থানা পর্যায়ে ভোট কেন্দ্র স্থাপন কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আর ডিসির নেতৃত্বে মহানগর/জেলায় ভোট কেন্দ্র স্থাপন কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। উপজেলা কমিটির তৈরি করা ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা মহানগর/জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। এ কমিটি দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্র সরেজমিন তদন্ত করে মতামত দেবে। এই মতামতসহ খসড়া তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। জানা গেছে, ইসির নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। ভোটার এলাকাগুলো যেন ভোট কেন্দ্রের সংলগ্ন ও সুনিবিড় হয় এবং দুটি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের বেশি না হয় তা দেখতে হবে। এ ছাড়া ভোটারদের যেন নিকটস্থ কেন্দ্র পার হয়ে দূরবর্তী স্থানে স্থাপিত কেন্দ্রে যেতে না হয় এবং একটি ভোট কেন্দ্রের অতি নিকটে যেন অন্য একটি কেন্দ্র স্থাপন করা না হয় তা দেখতে হবে। কোনো প্রার্থীর প্রভাবাধীন স্থাপনায় ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। সরকারি স্থাপনাগুলোকে ভোট কেন্দ্র স্থাপনে প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও অন্যান্য অফিস ভবনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে।

সর্বশেষ খবর