প্রায় ৯ বছর ধরে কার্যত কোনো কাজ নেই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের ৫৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। মহাপরিচালক (ডিজি), পরিচালক, উপপরিচালকসহ (ডিডি) এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বছরে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে অন্তত ৫ কোটি টাকা। কাজ না থাকলেও তারা দখল করে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের ১৫টি কক্ষ। কাজ না থাকায় বেশির ভাগই অনুপস্থিত থাকছেন দফতরে। উপস্থিত থাকলেও হাজিরা দিয়ে উধাও হয়ে যান কেউ কেউ। আর যারা অফিসে থাকেন তারাও পার করেন অলস সময়। কোনো কাজ ছাড়াই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে কোটি কোটি টাকা বেতন-ভাতা নিলেও এ দীর্ঘ সময়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কার্যত ২০১৫ সাল থেকে কোনো কাজ নেই এই দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তবে নানা বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রায় ৮০টি মামলা এ ইউনিটের হাতে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকের অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। এসব বিষয়ে কাজ করতে অনুমতি চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
জানা গেছে, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন, ১৯৯০ প্রণীত হয়। এরপর একই বছরের আগস্টে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কোষ সৃষ্টি করা হয়। পরে নভেম্বরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটে রূপান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে সারা দেশে শিশু শিক্ষা ও সাক্ষরতা জরিপ পরিচালনা, শিশুদের তালিকা প্রণয়ন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা, সরকারি/রেজিস্টার্ড/বেসরকারি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনসহ নানা কর্মকান্ড পরিচালিত হতো প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মাধ্যমে। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম এখন পরিচালিত হয় মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে। সে হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ইউনিটের কাজক্রম একেবারেই সংকুচিত হয়ে যায়। ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন দিবস পালন আর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত বিভিন্ন কাজ করা ছাড়া এ ইউনিটের কোনো কাজই নেই। এ দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন বসে বসে বেতন নেন।অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মোট জনবল ৫৫। তবে বর্তমানে এ দফতরে কর্মরত আছেন ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাকি পদ শূন্য। মহাপরিচালক এ দফতরের প্রধান। এ ছাড়া তিনজন পরিচালক, সাতজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কাজ করতে চাই। কাজ চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কারও কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।’ তবে মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, কাজ না থাকা এ ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্সবাজারে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টারে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। কিন্তু এ ইউনিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চান অন্যত্র নয়, বরং ঢাকায় থেকেই সারা দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ইবতেদায়ি স্কুলসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের তদারকির বাইরে রয়েছে সেগুলো নিয়ে কাজ করতে। কাজ না করে বছরের পর বছর বেতন নেওয়ার ব্যাপারে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে মোবাইলে কল করা হলেও রিসিভ করেননি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোছা. নূরজাহান খাতুন বলেন, ‘এ জনবলগুলোকে কাজে লাগাতে মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে বলে জেনেছি। তাই তাদের হয়তো অন্য কোথাও দেওয়া হয়নি।’