মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

শতাধিক মৃত ভোটার এক জায়গাতেই!

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারদের রাখা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইসির কাছে ভোটার তালিকা সংশোধনের আবেদন করা হলেও তা নাকচ করে দিয়েছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের কাছে পাঠানো এক আবেদনে ভান্ডারিয়া পৌরসভার খসড়া ভোটার তালিকা সংশোধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এক আবেদনে ভান্ডারিয়া পৌরসভার প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকা যথাযথ বাছাই ও সঠিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সংশোধনসহ পুনরায় ভোটার তালিকা তৈরির দাবিও জানানো হয়।

সূত্র জানিয়েছে, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সদর পৌরসভায় ভোটার তালিকায় শতাধিক মৃত ব্যক্তিকে তালিকায় রাখার পাশাপাশি এক ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অন্য ওয়ার্ডে দেখিয়ে ভোটার তালিকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় আট শতাধিক ভোটার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়া ভান্ডারিয়া পৌরসভার এ তালিকায় ২০১৭, ২০১৮ সালের মৃতরাও রয়েছেন। ২০২২ সালে সারা দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়ে তাদের যেমন বাদ দেওয়া হয়নি তেমনি সম্প্রতি পৌরসভার ওয়ার্ডসমূহের ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাসেও রাখা হয়েছে আগের মতো। স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের ২০ মে থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে চার ধাপে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ চলে। হালনাগাদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যোগ্য ব্যক্তিদের ভোটার করার পাশপাশি ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। তবে তা আমলে নেয়নি স্থানীয় কর্মকর্তারা। হালনাগাদ তালিকায় যেমন মৃতদের ভোটার রাখা হয়েছে। তেমনি পৌরসভার ওয়ার্ডসমূহের ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাসেও রাখা হয়েছে মৃতদের নাম।

জানা গেছে, গত ১৫ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পুনর্বিন্যাস করা সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করার জন্য লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়। মাত্র ১০ কার্য দিবসের মধ্যে নতুন এ ভোটার তালিকা করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চার কার্য দিবস পরেই ২২ মে নতুন ভোটার তালিকা করে প্রকাশ করে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়। এ ভোটার তালিকায় কারো কোন অভিযোগ থাকলে তা ২৩ ও ২৪ মে অফিস চলাকালীন সময়ে ভোটার তালিকা পুনর্বিনাসকারী কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ করা হয়।

প্রকাশ করা ভোটার তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে শতাধিক ভোটারের নাম রয়েছে যারা অনেক আগেই মারা গেছেন। যাদের অনেকেরই ডেথ সার্টিফিকেট রয়েছে। ভোটার নং ৭৯০৫১২০০০১০০ ইলিয়াস খান, পিতা- আসমত আলী খান ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন। ভোটার নং ৭৯০৫১৬৮১৪৭৭৯ আবদুল খালেক, পিতা- গফুর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট মারা গেছেন। একইভাবে ভোটার তালিকায় দোলোয়ার হোসেন, আবদুল আজিজ সিকদার, আবুল হাশেম হাওলাদার, আবদুল খালেক বেপারী, আবদুর রব হাওলাদার, গাজী আফজাল হোসেন, মহব্বত আলী হাওলাদারসহ আরো অনেক মৃত ভোটার রয়েছে হালনাগাদ ভোটার তালিকায়।

এ ছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকাতেও রয়েছে গোজামিল। অনেক ভোটারকে নিজ ওয়ার্ডের পরিবর্তে অন্য ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। শুধু ১ নম্বর ওয়ার্ডেই দুই শতজনের বেশি ভোটারকে অন্য ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৮০০ ভোটার রয়েছেন, যারা ২০২১ সালের ২১ জুনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাশের শিয়ালকাঠী ইউনিয়নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাদেরকেও নতুন হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগকারীরা বলছেন- মাত্র ৪দিনের মধ্যে পুরো পৌরসভার ভোটার তালিকা করতে গিয়ে এ ভুলভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি না গিয়েই তালিকাকে প্রকাশ করে দিয়েছেন। ভুলভ্রান্তিতে ভরা এ ভোটার তালিকা সংশোধন না করে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন আয়োজন করলে তাতে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। তবে যেহেতু ভোটার তালিকা প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী ২২ মে বিকেলেই অনিয়ম ও ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের আবেদন করেছেন অনেক ভুক্তভোগি। পৌরসভার ২০ জন ভোটার লিখিত ভাবে ওইদিনই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করেন। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বরাবর এসব ভুলভ্রান্তি উল্লেখ করে এলাকাবাসির পক্ষে তা সংশোধন করার আবেদন করেন মালিক মো. সওকত ইকবাল নামের একজন স্থানীয় ভোটার। তবে তার সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে ভুলভ্রান্তিতে ভরা ভোটার তালিকাই সঠিক বলে গত ২৪ মে পাল্টা এক চিঠিতে তাকে জানিয়েছেন ভান্ডারিয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসেন। এমনকি নতুন করে ভোটার তালিকা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে না বলেও সেই চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর