শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল রাজধানীর হোটেল লেকশোরে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির যে চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করতে, গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এবং সে অনুযায়ী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। সে লক্ষ্যগুলো অনেক উচ্চাকাক্সক্ষী। যেটা বাস্তবায়ন করা আসলে খুবই কঠিন এবং বাস্তবায়ন হবে না বলেও আমাদের ধারণা। কয়েক বছরের ট্রেন্ড শুধু নয়, চলমান যে অর্থনৈতিক চাপ, সেটার পরিপ্রেক্ষিতেও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না অনেকাংশে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখার (৬ শতাংশে নামিয়ে আনা) যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। মূল্যস্ফীতির যে উৎসটা চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে বেশির ভাগ মূল্যস্ফীতি আমদানিজনিত। আমরা অনেক পণ্য আমদানি করে থাকি। জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখী। সুতরাং মূল্যস্ফীতির চাপটা সম্পূর্ণভাবে বৈদেশিক উৎসের ওপর দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির পেছনে আমাদের অভ্যন্তরিন অনেক দুর্বলতাও রয়েছে। একদিকে যেমন কর কাঠামোর মধ্যে রয়েছে তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। বাজারে যে কারসাজিটা হয়, সেটাও মূল্যস্ফীতির কারণ। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি মুদ্রানীতিও রয়েছে। যেমন সুদের হার বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। সেটার প্রভাব। মুদ্রানীতির সঙ্গে যদি আর্থিক নীতির সমন্বয় না থাকে তাহলে মূল্যস্পীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হবে।

তিনি বলেন, একদিকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা না হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে হলে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হলো। আবার সরকারি সেবা গ্রহণ করতে হলে যার করযোগ্য আয় নেই তার কাছ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করা হবে। এর কোনো যৌক্তিতা খুঁজে পাইনি আমরা। কর দেওয়ার নিয়ম কী? যে কর দেওয়ার যোগ্য। যার ক্যাপাবিলিটি আছে। যে ওই পরিমাণ পর্যন্ত আয় করছে সে-ই তো দেবে। সেটার বিষয়ে একটা নীতিমালা করলাম। কিন্তু আবার পাশাপাশি যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপর একটা কর বসিয়ে দিলাম। এটা বৈষম্যমূলক, সাংঘর্ষিক। আমাদের দাবি, সেটা তুলে দেওয়া হোক। এটা নৈতিকভাবে ঠিক নয়। মূল উদ্দেশ্যটা এখানে নষ্ট হয়ে যাবে।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই কঠিন সময়ে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল যা নেওয়া হয়নি। রেমিট্যান্স নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কিন্তু নিম্নমুখী। বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি খাতে ব্যাপক একটা ঘাটতি দেখা গেছে। এর ফলে অভ্যন্তরিন উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বিষয়ে বাজেটের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন অর্থবছর ২০২৩-২০২৪ এ জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালে যেটা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? সেটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে একটি উচ্চাকাক্সক্ষা। ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ নিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মিলছে না। ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে সেটা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। সংস্থার সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সর্বশেষ খবর