বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে রাজধানীর নয়াপল্টনসহ দেশের জেলা ও মহানগরে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দলটি। ঢাকায় নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক সমাবেশে আগামীকাল (শুক্রবার) ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এদিন বেলা ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য রাখবেন। তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই রায় অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ তারেক রহমানের প্রতি তাঁর চরম প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। মিথ্যা মামলায় এটি সাজানো রায়। বিচার বিভাগের দলীয়করণের এটা আর একটি নিকৃষ্ট নজির।’
রায়ের প্রতি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে এই রায় প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেওয়া হবে, এ নিয়ে কারও সংশয় ছিল না। কারণ আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের নির্মূল করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়, সেই নীলনকশা ধরেই সরকারপ্রধান এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সেজন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। আজ এই ফরমায়েশি রায় দেওয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্র শূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঠিকানা ও মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক উত্থান সহ্য করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ঈর্ষা-প্রতিহিংসায় জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছেন জবরদস্তি করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা শেখ হাসিনা। তাকে বিনাশ এবং তার জনপ্রিয়তা ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য হেন অপকর্ম নেই যা করছে না এই ভোটারবিহীন সরকার। কারণ তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে প্রধান দিশারী। সেই কারণেই শেখ হাসিনা টার্গেট করেছে তারেক রহমানকে। আগেও কয়েকটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে ফরমায়েশি রায়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে।’ এদিকে আদালতের রায় ঘোষণার পর গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই মিছিল শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’ তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা আড়াইটার পর নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সাড়ে ৩টার পর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের সময় নয়াপল্টন সংলগ্ন নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ছিল। তবে মিছিলে বাধা দেয়নি পুলিশ। নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সভায় সভাপতি ছিলেন আবদুস সালাম। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু। বুলু বলেন, ‘এই রায় সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না। আপনাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে এই বাংলার মাটিতে আপনাদের বিচার করা হবে। এজন্য প্রস্তুত থাকুন।’
আজকের কর্মসূচি : আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : আদালতের রায়ের প্রতিবাদে গতকাল সিলেট, বরিশাল, বগুড়া, নাটোর, ফরিদপুরে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। বিএনপি অভিযোগ করেছেন ফরিদপুরের বিক্ষোভে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা হামলা চালালে ৫০/৬০ জন বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
রায়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ আজ, সমাবেশ কাল : দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ দেশব্যাপী বিক্ষাভ কর্মসূচি পালন করবে মহানগর ও জেলা শহরে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আগামীকাল দুপুর আড়াইটায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নয় বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
প্রতিহিংসার প্রতিফলন এ রায়- কর্নেল অলি : লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়াটা দেশে বিরোধী দলশূন্য করার অপপ্রয়াস। এ রায় প্রতিহিংসার প্রতিফলন। এ রায়ের ফলে বিচার বিভাগ প্রমাণ করেছে তারা স্বাধীন নয়। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। অলি আহমদ বলেন, আজকের ফরমায়েশি রায় জিয়া পরিবারের প্রতি সরকারের হিংসা ও আক্রোশের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
গণ আন্দোলনে সরকার ভীত- এনডিপি : এনডিপি সভাপতি কে এম আবু তাহের বলেছেন, গণ আন্দোলনে ভীত সরকার আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দিতে বাধ্য হওয়ার পরিস্থিতি দেখে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটাধিকারের এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনরত অবস্থায় এ ধরনের মিথ্যা ও ফরমায়েশি মামলার রায় দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। গতকাল সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় এ কথা বলেন তিনি।
এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে দেশবাসী- লেবার পার্টি : বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান বলেছেন, সরকার নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই আদালতকে ব্যবহার করে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজানো রায় দিয়েছে। জনগণ এ রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন।
সরকারের ইশারায় রায়- ঢাবি সাদা দল : রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে সরকারের ইশারায় তড়িঘড়ি এ রায় প্রদান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করে সংগঠনটি। সাদা দলের পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেছেন দলটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম। বিবৃতিতে রায়টি প্রত্যাখ্যান করে উদ্বেগ প্রকাশ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        