ভারত এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে দেশটি বলেছে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের বন্ধুপ্রতিম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে।
গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের ভারত সফর নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, দলীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারত সফর করে। প্রতিনিধি দল ৬ আগস্ট দিল্লিতে পৌঁছায় এবং ৭ ও ৮ আগস্ট বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও বিজেপি নেতারা ও ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, ৭ আগস্ট সকালে বিজেপি সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডার সঙ্গে তাঁর বাসভবনে বৈঠক হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, তাঁর দল এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ওই দিন দুপুরে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তড়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ বৈঠকে বিনোদ তড়ে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দল এ সম্পর্ক অটুট রাখতে কাজ করে যাবে। বিকালে ভারতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্করের সঙ্গে তাঁর দফতরে বৈঠক হয়। বৈঠকে ড. জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দুই দেশের মধুর সম্পর্ক যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি উচ্চতায়। ৮ আগস্ট ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের (রাজ্যসভা) নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং ভারতে জি-২০ সম্মেলনের কো-অর্ডিনেটর ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পীযূষ গয়াল বৈঠকে আশা প্রকাশ করেন যে, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যশস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি ভারত সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। একই সঙ্গে ভারত যাতে বাংলাদেশ থেকে আরও পণ্য আমদানি করতে পারে, সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা প্রস্তাবের অনুরোধ জানান। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর জি-২০ ফোরামের ভারতের কো-অর্ডিনেটর হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক বৈঠকে তিনি আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে বিজেপি জানিয়েছে, চীন ও জামায়াতে ইসলামী ভারতের জন্য কোনো ঝুঁকি নয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত সফরকালে বিজেপির মহিলা সংগঠন মহিলা মোর্চা, যুব সংগঠন যুব মোর্চা ও ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করে এবং বিজেপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটি আয়োজিত ভোজ সভায় যোগদান করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নয়াদিল্লিতে যুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন করে।