ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগ বাতিল করে দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল তার নিয়োগ বাতিল করে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং।
এদিকে বরখাস্ত হওয়ার পর বিকালে নিজের নিরাপত্তা শঙ্কার কথা উল্লেখ করে সপরিবারে আশ্রয় নিতে মার্কিন দূতাবাসে যান এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। এক খুদেবার্তায় তিনি জানান, ‘আমি মার্কিন দূতাবাসে আজকে পুরো পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য বসে আছি। বাইরে পুলিশ। আজকে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমার ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে গত চার-পাঁচ দিন ধরে অনবরত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার আমেরিকার কোনো ভিসা নেই। স্রেফ তিনটি ব্যাগে এক কাপড়ে আমার তিন মেয়েসহ কোনোক্রমে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে বসে আছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে সাড়ে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বরখাস্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাত ৮টার দিকে পুলিশি নিরাপত্তায় রাজধানীর লালমাটিয়ার বাসায় ফিরে গেছেন। গ্রেফতারের শঙ্কা নেই বলে সরকারের তরফ থেকে দূতাবাসকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা এমরানকে এ তথ্য জানালে তিনি বাসায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সোয়া ৮টায় এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দূতাবাসে অপেক্ষা করেছি। আমাকে গ্রেফতারের আশঙ্কা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। পরে পুলিশ এস্কট দিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।’ এর আগে গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ওই দিন তিনি বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৭৫ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনও রয়েছেন। ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাকে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করব না।অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে- এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া এমন কথা বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পরদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতির কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অন্য কোনো পক্ষকে খুশি করার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া এটা বলেছেন। নিশ্চয়ই এখানে তার কোনো উদ্দেশ্য ছিল। সেদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিবৃতি-সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।