গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমি তো কোনো অপরাধ করিনি শঙ্কিত হব কেন?
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, আমাকে ডাকা হয়েছিল, তাই এসেছিলাম। যেহেতু এটা আইনি বিষয়, তাই বিস্তারিত আমার আইনজীবী বলবেন। ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ মামলা অবশ্যই ভিত্তিহীন। তাঁর বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগে অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি ড. ইউনূসের আইনজীবী হিসেবে ভিতরে (দুদক কার্যালয়ে) গিয়েছিলাম। আমি আইনের সমস্ত ব্যাখ্যা ওইখানে দিয়েছি। উনারা (দুদক) বলেছেন, ওই সমঝোতা চুক্তিটি জাল। আমি বলেছি, আপনারা জাল বলতে পারেন না, কারণ দুই পক্ষের সমঝোতা যখন হয় তখন আর সেটা জাল থাকে না। এটা হাই কোর্টের অনুমোদন পাওয়া, সুতরাং এটা জাল না। তিনি আরও বলেন, ওই চুক্তিতে ছিল শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে আমরা অ্যাকাউন্ট করেছি। তিনি আরও জানান, আমরা টেলিফোনে অনুমতি নিয়েছি, কারণ সবাই একসঙ্গে থাকে না। আমরা ৯ তারিখের জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার অনুমতি নিয়েছি। দুদক বলেছে, আপনারা অনুমতিটা পরে নিয়েছেন। আমি বলেছি, দেরি হওয়ার ঘটনা যদি ঘটে থাকে; তাহলে এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে আইনজীবীকে নিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসানও ছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলা দুদক করেনি, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকরা কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরে যে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁরা তার সত্যতা পেয়েছেন। সেই অভিযোগটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় নিয়ম মেনেই মামলাটি করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে ওনার যে অবস্থান সেটা জানার জন্য এখানে ডাকা হয়েছে। তাই দুদক কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী কাজ করে, এখানে ব্যক্তিপরিচয় দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ সময় তিনি জানান, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের অভিযোগের মধ্যে ছিল : অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশ থেকে ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, তাদের পাওনা ৩৬৪ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪৬ টাকা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর।
দুদক সচিব আরও বলেন, বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় আসামির মধ্যে একজন জামিনে আছেন। বাকিদের বিষয়ে আমার কাছে হালনাগাদ তথ্য নেই। এ সময় সাংবাদিকরা যেসব অভিযোগে মামলা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে কোনোভাবেই জানার সুযোগ নেই, এটি কী পর্যায়ে আছে। তিনি জানান, গত ৩০ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। মামলার আসামির মধ্যে রয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এ ছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম।
জানা যায়, গত বুধবার গ্রামীণ টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির আরও তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তাঁরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক নাজনীন সুলতানা, নূরজাহান বেগম ও হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। ২৭ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে তলব করে দুদক।