দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তফসিল কেন্দ্র করে নাশকতা এড়াতে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি। তফসিল ঘোষণার পর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে- গোয়েন্দাদের এমন প্রতিবেদনের পরই সতর্ক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর ওপর ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকার ভিতরে এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোয় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে; যাতে আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর নাশকতা বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করব। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এজন্য আইনানুগভাবে সবকিছুই করা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর সন্ধ্যায় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। ওই ভাষণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণা দিতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আলোচনাও হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অতীতের মতোই র্যাবের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি থাকবে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে র্যাবের সদস্যরা এরই মধ্যে নজরদারি করছেন। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখা হচ্ছে সাইবার ওয়ার্ল্ড। অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনে হেলিকপ্টার দিয়ে নজরদারি করা হবে।
সূত্র জানান, এবার নির্বাচনের আগে বেশি সহিংসতা হয়েছে রাজধানী ঢাকা শহরে। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বগুড়ায় সহিংসতা হয়েছে। ডিএমপির তথ্যানুযায়ী গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় মোট ৬২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর বিভাগে ১৫টি, ওয়ারী বিভাগে ১৩টি, মতিঝিল বিভাগে ১০টি, তেজগাঁও বিভাগে ৮টি, রমনা বিভাগে ৬টি, গুলশানে ৫টি, লালবাগে ৩টি, উত্তরায় ২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া থানা এলাকা হিসেবে যাত্রাবাড়ীতে সবচেয়ে বেশি ৯টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। ডিএমপিসূত্র জানান, গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে দিনভর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঢাকার ৫০ থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মনিটরিং সেলের মামলাগুলো নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা। তবে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনার পুরো সময়টাতেই বিএনপির চলমান আন্দোলন, অবরোধ ও তফসিলের পর নাশকতা এবং সহিংসতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, ডিএমপি কমিশনার আইনের মধ্যে থেকে সহিংসতা ঠেকানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক প্রচারণা হয় এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং গুলি চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণগ্রেফতার না করে সুনির্দিষ্টভাবে নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্তদের গ্রেফতারে জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ডিএমপিসূত্র জানান, ঢাকায় বাসে আগুন ঠেকানোর ওপর বিশেষ জোর দিয়ে প্রতিটি ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থায়ই যেন চলমান সহিংসতার পরিধি আর না বাড়ে সেজন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সহিংসতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে বেশি প্রচারণা পেতে পারে। এজন্য সহিংসতার পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
ডিএমপিসূত্র জানান, চলমান অবরোধে আগের মতোই রাজধানী ঢাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তবে বুধবার (আজ) তফসিল ঘোষণা হলে সন্ধ্যায় প্রয়োজনে আরও বেশি ফোর্স মোতায়েন করার নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সহিংসতা হতে পারে সেসব এলাকায় পোশাকধারী পুলিশি টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি করার নির্দেশনা রয়েছে।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত থাকা ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে সহিংসতা বন্ধ করার প্রতি জোর দিতে বলেছেন ডিএমপি কমিশনার স্যার।’ চলমান সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশের তৎপরতার প্রশংসাও করেছেন তিনি। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে গ্রেফতার বাণিজ্যে সম্পৃক্ত না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছেন তিনি।
