ট্রেভিস হেড হাসছেন। হাসছেন প্যাট কামিন্স, ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মারনাস লাবুশেন, মিচেল ক্লার্ক, জশ হ্যাজলউডরা। সাবরমতী পাড়ের আহমেদাবাদের সবুজ ঘাসের উইকেটে বসে কেঁদেছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ সামিরা। কেঁদেছে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের সোয়া লাখ ক্রিকেটপ্রেমী। কেঁদেছে ১৪০ কোটির ভারত। ট্রেভিস হেডের অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া আবারও চ্যাম্পিয়ন। আবারও বিশ্বসেরা। একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ শিরোপা জিতেছে তাসমান সাগর পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া। আহমেদাবাদে ভারতকে কাঁদানোর নায়ক হেড। ডানহাতি ওপেনারের বয়স ৩০ ছুঁইছুঁই। ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৬৪টি। সেঞ্চুরি ৫টি। ছোট্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে নান্দনিক, গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী সেঞ্চুরিটি করেছেন গতকাল। হেড দলের প্রয়োজনে ওপেন করেন। প্রয়োজনে মিডল অর্ডারে। যখনই ব্যাটিংয়ে নেমেছেন, তখনই হিমালয়সমান দৃঢ়তায় দায়িত্ব পালন করেছেন শতভাগ। গতকাল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে এমন একসময় সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেছেন, যখন ওপরের সারির তিন ব্যাটারকে (৪৭/৩, ৬.৬ ওভার) হারিয়ে ধুঁকছিল। সেই বিপর্যয় সামলে নেন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মারনাস লাবুশেনকে নিয়ে। শুধু সামলে নেওয়াই নয়, তিন অঙ্কের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে এক আসর পর আবার বিশ্বসেরা করেন। সাবরমতী নদীর পাড়ের আহমেদাবাদে ভারতের বিরুদ্ধে যে সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেছেন হেড, নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। তার সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে হেরে ২০ বছর আগের প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ ভারত কেঁদেছে। অবিশ্বাস্য জয়ে গ্রুপপর্বে হারের প্রতিশোধও নিল কামিন্স বাহিনী। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বসেরা নায়ক হেডের সঙ্গী লাবুুশেনও। ২৪১ রানের টার্গেটে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল চ্যাম্পিয়নরা। চতুর্র্থ উইকেট জুটিতে হেড ও লাবুশেন ৩৫.৫ ওভারে যোগ করেন ১৯২ রান। লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ১১০ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে। উইনিং শটটি খেলেন ম্যাক্সওয়েল। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, মিচেল মার্শদের মতো বড় তারকা রয়েছেন দলে। তারপরও দায়িত্ব পালণে দৃঢ় হেড গতকাল ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছেন। ১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড ৮৫ বলে ১০২ রান করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে সেঞ্চুরি করেন অসি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার ১২৫ রানে জয়ী ম্যাচে পন্টিং ১৪০ রান করেছিলেন ১২১ বলে। ২০০৭ সালে কিংস্টোনে সেঞ্চুরি করেন অসি উইকেটরক্ষক ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের উৎসব করেছিল গিলক্রিস্টের ১০৪ বলে ১৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে। ২০১১ সালে ওয়াংখেড়ে ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে। ৮৮ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাহেলা। অথচ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। এক যুগ পর ফের বিশ্বকাপের ফাইনালে কোনো ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করেন। গতকাল ট্রেভিস ১৩৭ রানের ম্যাচসেরা ইনিংসটি খেলেন ১২০ বলে ১৫ চার ও ৪ ছক্কায়। অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫ ও ২০২৩ সালে। চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক হিসেবে প্যাট কামিন্স ফ্রেমবন্দি হন অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্কের। ভারত ১৯৮৩ ও ২০১১ সালে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ হয় ২০০৩ ও ২০২৩ সালে। ফাইনালের আগের দিন দুই দলের অধিনায়কই ছুটে যান উইকেট দেখতে। পুণে, দিল্লি, মুম্বাই কিংবা চেন্নাইয়ের সঙ্গে কোনো মিল নেই আহমেদাবাদের মোদি স্টেডিয়ামের উইকেটের। পুণে, মুম্বাই, দিল্লিতে রান উৎসব হয়েছে। মোদি স্টেডিয়ামের ধীরলয়ে উইকেটে রান তুলতে নাভিশ্বাস উঠেছে ব্যাটারদের। চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে আহমেদাবাদের ৪ ম্যাচের ৩টিতেই রান তাড়া করে জিতেছে দলগুলো। তবে প্রথমে ব্যাট করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরিসংখ্যানে আস্থা রেখে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক কামিন্স, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্করা দারুণ বোলিং করে স্বাগতিকদের আটকে রাখেন ২৪০ রানে। স্কোর আরও বড় হতে পারত। কিন্তু ৯.৪ ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতের যে ক্যাচটি নেন ট্রেভিস হেড, ওই দুর্দান্ত ক্যাচেই রানের গতি আটকে যায় স্বাগতিকদের। ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় রোহিত বাহিনী। ক্যাচটি স্মরণ করে দেয় কপিল দেবকে। লর্ডসে ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ প্রায় ১৫ গজ দৌড়ে নিয়েছিলেন কপিল। ওই ক্যাচে ভারত ম্যাচে ফিরে জিতেছিল বিশ্বকাপ। হেড ১০-১২ মিটার দৌড়ে রোহিতের ক্যাচ নেন, তখনই চালকের আসনে বসে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলা রোহিত ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন ৩১ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। বিরাট কোহলি আসরের ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৬৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি শেষ হয় দুর্ভাগ্যজনক প্লেড অনে। চলতি আসরের ১১ ম্যাচে কোহলির রান ৩ সেঞ্চুরি ৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ৭৬৫। রোহিতের রান ৫৯৭। মিডল অর্ডারে ব্যাট করে ভারতকে একাই টেনে নেন লোকেশ রাহুল। ৭২ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি ছিল ৬৬ রানের।
শিরোনাম
- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে : পররাষ্ট্রসচিব
- সন্তানের বিশাল ‘বাহিনী’ বানাতে চান ইলন মাস্ক, শুক্রাণু পাঠালেন জাপানি নারীকেও
- শুক্রবার কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করবে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা
- সীমান্তে অব্যাহত বাংলাদেশি হত্যায় এনসিপির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
- ট্রাম্পের শুল্ক বহাল থাকলে জুনে ফোর্ড গাড়ির দাম বাড়তে পারে
- মিথ্যা ধর্ষণের মামলার বাদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- ইউনাইটেড হাসপাতালের ১২ কোটি টাকার শেয়ার আত্মসাৎ
- কুমিল্লায় বিসিক বৈশাখী মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যে ক্রেতাদের আগ্রহ
- স্বামীর জুয়ার আসক্তি, পঞ্চগড়ে বিষপানে মা-ছেলের মৃত্যু
- পুতিনকে চিঠি লিখলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
- যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসা বাতিলে বাড়ছে উদ্বেগ
- ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫’ আসছে, জানালেন অমি
- রণবীরকে বিয়ে না করার অন্যতম কারণ জানালেন ক্যাটরিনা
- সিলেট টেস্টের টিকিটের দাম জানালো বিসিবি
- লেজার ক্ষেপণাস্ত্রে বড় সাফল্য ইরানের
- ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার
- আল আকসা চত্বরে হাজারো ইহুদি
- ভারতে মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান বাংলাদেশের
- শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা
- প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতার যাচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
ভারতকে উড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর