সোমবার, ২০ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে গিয়ে নিখোঁজ এমপি আনার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতে গিয়ে নিখোঁজ এমপি আনার

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ভারতীয় পুলিশ গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারলেও তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি জানিয়েছে, নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম আনারের ভারতীয় নম্বরের সর্বশেষ লোকেশন মুজাফফারাবাদ, অর্থাৎ বিহারের দিকে। এ ছাড়া এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গতকাল বিকালে গোয়েন্দা পুলিশকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন তার বাবার বিষয়টি। পরবর্তীতে ডরিন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। পুরো বিষয়টি আমরা ডিবিপ্রধানকে অবহিত করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১২ মে দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যান। কলকাতায় গোপাল নামে পরিচিত একজনের বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালে নাশতা করে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় গোপালের বাসায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি।

তিনি আরও বলেন, তখন থেকেই তার মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ওনার মোবাইলে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। এমপির মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে যে মেসেজগুলো আসছে... বলা হচ্ছে, তিনি দিল্লিতে আছেন, ওমুক-তমুকের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু মেসেজগুলো এমপির পরিবার বিশ্বাস করছে না।

হারুন অর রশীদ বলেন, আমি বিষয়টি দুই দিন আগে জানতে পারি। ভারতীয় একজন ভদ্রলোক এমপিরও পরিচিত, তিনি আমাকে টেলিফোন করে তার (আনোয়ারুল আজিম আনার) বিষয়টি জানান। জানার পর ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসটিএফের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতীয় পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, এমপির একটি বাংলাদেশি ও আরেকটি ভারতীয় নম্বর ছিল। ১৬ মে সকাল ৭টার দিকে এমপির নম্বর থেকে দুটি ফোন আসে। একটি আসে এমপির এপিএসের নম্বরে, আরেকটি ফোন আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর নম্বরে। কিন্তু তখন দুজনের কেউই টেলিফোন ধরতে পারেননি। তিনি বলেন, ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় জানতে পেরেছি, সংসদ সদস্যের ভারতীয় নম্বরের লোকেশন মুজাফফারাবাদ, অর্থাৎ বিহারের দিকে। সবকিছু মিলিয়ে আমরাও খোঁজখবর রাখছি। তার মেয়ে এসেছেন আমাদের কাছে। তার নম্বরটি মাঝে মাঝে খুলছেন আবার মাঝে মাঝে বন্ধ করছেন। কারা কাজটি করছেন, তিনি কোনো ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েছেন কি না... সবকিছুই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ভারতীয় পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।

আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আবদুর রউফের বরাতে জানান- গত ১২ মে দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি চিকিৎসার জন্য ভারত যান। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ১৬ মে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে মিসকল আসে। এরপর পাঁচ দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, ঘটনা যদি সত্য হয়, তবে তা খুবই উদ্বেগ ও দুঃখজনক ব্যাপার। তিনি দল ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবেন বলে জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, বিষয়টি তার পরিবার আজকেই (গতকাল) আমাকে জানিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে জানাবেন। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান (বিবিএম-সেবা) জানান, এমপি সাহেব নিখোঁজের বিষয়টি জানার পর পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়েছি। ভারতে একটি মিসিং ডায়েরি হয়েছে। সেটি করেছেন এমপি সাহেবের বন্ধু গোপাল। পুলিশ যথেষ্ট সচেতন তাকে উদ্ধারের জন্য। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে কলকাতা প্রতিনিধি স্থানীয় বরানগর থানায় দায়ের করা নিখোঁজ ডায়েরির বরাত দিয়ে জানান- পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার অন্তর্গত ১৭/৩ মঙ্গলপাড়া লেনের বাসিন্দা দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন ১২ মে। পরদিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান আমি দুপুরে খাব না। সন্ধ্যায় ফিরে আসব। কিন্তু সন্ধ্যায় না ফিরে whatsapp-এ মেসেজে জানান- তিনি দিল্লি চলে যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে ফোন করবেন। দুই দিন পর ১৫ মে whatsapp-এ মেসেজ করে জানান- ‘তিনি দিল্লি পৌঁছে গেছেন। তার সঙ্গে বেশকিছু ভিআইপি ব্যক্তি রয়েছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। প্রয়োজনে তিনিই ফোন করে নেবেন। ১৬ মে সকালে দিল্লি থেকে ওই বাংলাদেশি এমপি তার ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোন করেন; কিন্তু সে সময় তার সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে যখন তিনি পাল্টা ফোন করেন, সে সময় এমপির তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ১৭ মে সংসদ সদস্যের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান- তিনি তার বাবার সঙ্গে কোনোরূপ যোগাযোগ করতে পারছেন না। ওই ঘটনার পর থেকেই গোপাল বিশ্বাস সংসদ সদস্যের পরিচিত এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস।  এ ব্যাপারে গতকাল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ জোন) অনুপম সিং জানান- ‘প্রাথমিকভাবে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা আসেনি।’ এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান- ‘তাকে ফোন করা হলেও তার ফোন বেজে যায়, কিন্তু তিনি তোলেননি।’ যদিও তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। উপকমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা জানান- তারাও বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন।

সর্বশেষ খবর