সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত

দুজনের মৃত্যু, জলোচ্ছ্বাস, আবার ঢাল হলো রুগ্ন সুন্দরবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত

পটুয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাস। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। নোয়াখালীতে গতকাল স্থাপনা সরিয়ে নেন অনেকে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রবল শক্তি নিয়ে গতকাল আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সন্ধ্যা ৬টার পরই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানে। গত রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। রাত ১২টার পর জোয়ারের পানির সঙ্গে বাড়ে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, সাতক্ষীরা, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলো। সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ সারা দিন দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবেই দুপুর থেকে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় জেলাগুলো। তবে এবারও ঘূর্ণিঝড়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। রিমালের সঙ্গে টানা দুই ঘণ্টার বেশি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ম্যানগ্রোভ বনের লাখো গাছ। সুন্দরবনের দুবলা, কটকা, কোচিখালি ও হিরণ পয়েন্ট এলাকা ৭ থেকে ৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেক পশু লোকালয়ে এসে আশ্রয় নেয়। দুবলার অস্থায়ী শুঁটকিপল্লীর কাঁচা ঘরসহ কয়েকটি বন অফিস ও টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অফিসের টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। জলোচ্ছ্বাসের পানির তোড়ে দুবলা বন অফিস ঘাটের পন্টুন সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন বন অফিস এলাকায় কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণীদের মিঠাপানির একমাত্র উৎস পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসের লোনাজলে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের গাছপালারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঘ-হরিণসহ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড ম্যানগ্রোভ এই বনের বন্যপ্রাণীকূলের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি কেউ। উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ঘূর্ণিঝড় রিমলের প্রভাবে দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় বিদ্যুতের লাইনের ওপর গাছপালা উপড়ে পড়ায় বাগেরহাট জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। এ ছাড়া স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে উপকূলীয় জেলাগুলো। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল রাখা হয়। রাত ১২টার পর বৃষ্টিপাত ও বাতাসের বেগ বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি তার পুরো পথ পাড়ি দিতে আরও ৫-৬ ঘণ্টা লাগবে। বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। আজ সকালেও ঘূর্ণিঝড় শক্তি ধরে রাখতে পারে। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, আশঙ্কার তুলনায় আগেভাগেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগের প্রভাবে পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। বাতাসের তোড়ে এসব এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার ৮ লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল দুপুরেই উচ্চ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল। ডুবে যায় রাস্তাঘাট। পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর-দোকানপাটে। জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট ও পটুয়াখালীর কয়েক হাজার বাড়িঘর প্লাবিত হয়। দুপুরে জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গতকাল দুপুরে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার সময় স্ট্রোক করে শওকত মোড়ল নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে দেখা গেছে। উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে চট্টগ্রামের শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গতকাল হজ ফ্লাইট বাতিল করে ৩১৭ হজযাত্রীকে বাসে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। গাছ পড়ে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নিরাপত্তার জন্য গতকাল কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ রাখা হয় উপকূলীয় জেলাগুলোয় নৌচলাচল। ৯ হাজারের বেশি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও ওষুধ রাখা হয়। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে সরকার। উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে ছিল সরকারের সবগুলো বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।

সারা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে : দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকায় কমবেশি ক্ষতি হতে পারে। ঝড়ের কারণে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। ঝড় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা মনে করছি বৃষ্টিপাতের জন্য সারা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা আছে। গতকাল সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি কার্যক্রম মনিটরিং করছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বে এবং পরামর্শে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে তিনি এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রিমাল মোকাবিলায় সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রস্তুত। কোস্টগার্ড তিন দিন ধরে উপকূলের ৫৭টি স্থানে মাইকিং করছে। একই সঙ্গে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বোটের সঙ্গে কিছু রিলিফও তারা জোগাড় করে রেখেছে। এ দুর্যোগে যাতে জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সে লক্ষ্যে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সভা করেছি। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৯৯৯ সেল চালু করেছি। যেকোনো অভিযোগ বা প্রয়োজন হলেই এই ৯৯৯-এ কল দিয়ে সেবা নেওয়া যাবে।

আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা : রিমালের কারণে উপকূলীয় এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কারণে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকার্যক্রম যদি প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হয় তাহলে স্থানীয়ভাবে তা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলা দুর্যোগব্যবস্থাপনা কমিটি পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই সব এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ব্যবহার ও শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বন্ধ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-বরিশাল বিমানবন্দর, ঢাকায় স্বাভাবিক : ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গতকাল কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ রুটে চলাচলকারী দেশের এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্লাইট বাতিল করে। তবে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখনো ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত স্ব স্ব বিমানবন্দর ও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যশোর বিমানবন্দর এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও বাতাসের তীব্রতার কারণে বিমান এ রুটে ফ্লাইট বাতিল করে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রবিবার সারা দিন কক্সবাজার বিমানবন্দর বন্ধ এবং দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করায় এ রুটে ফ্লাইট যাচ্ছে না।

উপকূলীয় জেলাগুলোর নৌযান চলাচল বন্ধ : রিমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ, ভোলার সব নদনদী এবং ঢাকার সদরঘাট ও দোহার উপজেলার মৈনটঘাট থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-ভোলা : ভোলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। মেঘনার জোয়ারের পানিতে চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ডালচর, চর পাতিলা এবং মনপুরা উপজেলার কলাতলীরচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আরও শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার উপকূলীয় নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে শ্যামনগরের কলবাড়ি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চুনা ও খোলপেটুয়া নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি ঢুকছে বসতবাড়িতে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

চট্টগ্রাম : রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। রবিবার বিকাল ৩টা থেকে টানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর বিকালে টানেলের উভয়প্রান্তের চারটি ফ্লাড গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ স্বাভাবিক হলে আজ সকাল থেকে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি : রাঙামাটিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৩২২টি আশ্রয় কেন্দ্র। বিশেষ করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সরিয়ে নিতে খোলা হয়েছে এসব আশ্রয় কেন্দ্র। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় করা হচ্ছে সতর্কতা মাইকিং।

পটুয়াখালী : জেলার সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৩৫টি মুজিব কিল্লা ও কুয়াকাটার সব আবাসিক হোটেল-মোটেল আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার নদনদীর পানি ৭-৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও মির্জাগঞ্জে বেশ কিছু স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ, আন্ডারচর ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মির্জাগঞ্জের মেহেন্দিয়াবাদ ও সুন্দ্রা পয়েন্টে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলাপাড়ায় বেড়িবাঁধের বাইরে নিশানবাড়িয়া, কাউয়ার চর এলাকা পানিতে থইথই করছে।

পিরোজপুর : রিমালের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পিরোজপুরে। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়েছে হালকা বৃষ্টি ও দমকা বাতাস। কচা, বলেশ্বর ও কালিগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীর পানি জোয়ারে এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে।

কক্সবাজার : রিমালের প্রভাবে কক্সবাজার শহরে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বেড়েছে সমুদ্রের পানিও। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরের নিম্নাঞ্চল। নিম্নাঞ্চলের মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে পানি ঢুকে পড়েছে।

বাগেরহাট : রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। বাগেরহাটের সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানি ঢুকে পড়েছে তীরবর্তী বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়ে। গতকাল দুপুরে জেলা সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকার ২ শতাধিক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। গতকাল দুপুর থেকে বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের স্থলভাগ চার থেকে সাত ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রও চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।

খুলনা : রিমালের প্রভাবে গতকাল সকাল থেকে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলজুড়ে দমকা বাতাস ও মাঝে-মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। দুপুরের জোয়ারে নদনদীর পানি পাঁচ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এতে তলিয়ে যায় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। জোয়ারে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে খুলনার কয়রার দক্ষিণ বেতকাশির আংটিহারা, খাসিটানা, মাটিভাঙা ও উত্তর বেতকাশি গাববুনিয়ায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। একইভাবে জোয়ারে পাইকগাছার কুমখালী, রাড়ুলি মালোপাড়া, বেতবুনিয়া, দাকোপের বটবুনিয়া ও বটিয়াঘাটার কাজিবাছা নদীর পানি বেড়ে বটিয়াঘাটা বাজার এলাকা প্লাবিত হয়।

নোয়াখালী : রিমালের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১৫টি গ্রাম। গতকাল দুপুরে জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। এতে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নসহ আশপাশের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর