বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বহু আগের। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার দেশ স্বাধীনের পরই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু ট্রাম্পকার্ড হিসেবে আমাদের রাজনীতিতে বারবার জামায়াতকে ব্যবহার করা হয়েছে। এতদিন পর এসে তাদের নিষিদ্ধ করা হলো। তাও বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ-সহিংসতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যে কারণে পূর্ব থেকেই তাদের নিষিদ্ধ করার কথা ছিল, সেটা কিন্তু হলো না। নিষিদ্ধ করা দরকার তাদের আদর্শ, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার। অদূর ভবিষ্যতে অন্য কোনো নামে, অন্য কোনো পরিচয়ে সংগঠনটি ফের মাথাচাড়া দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরসহ সব সহযোগী সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আমাদের সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদেও পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধের জায়গায় থাকতে হবে। এখন যেভাবে নিষিদ্ধ করা হলো, তাতে তারা যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারে। এখানে কোনো ব্যক্তি বা দলের নাম প্রধান নয়। প্রধান হচ্ছে তাদের রাজনীতি কী? সেটা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আমাদের ক্ষমতাসীন দলগুলো জামায়াতকে যার যার মতো করে ব্যবহার করেছে। আমরা নীতিগত অবস্থান থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ চাই। ট্রাম্পকার্ড হিসেবে তাদের ব্যবহার করব, কখনো নিষিদ্ধ করব, কখনো অনুমতি দেব, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ রেখে দেব- এটা তো ঠিক হবে না।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশ স্বাধীনের পর এই দীর্ঘ সময়ে জামায়াতের একটা রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হয়েছে। তাদের একটা অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তাদের একটা সামাজিক-সংস্কৃতির ভিত্তিও তৈরি হয়েছে। এখন দরকার এর পুরোটাকে উপড়ে ফেলা। কিন্তু এ সময়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে জামায়াতকে অর্থায়ন করা একটা ব্যাংক নিয়ে নেওয়া হলো। সেটা লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলো। তাহলে লাভটা হলো কি? তার অর্থনীতি ধ্বংস করতে যেটা করলেন, সেটাও ঠিকভাবে করতে পারলেন না। জামায়াতকে দুর্বল করতে হলে প্রকৃতপক্ষে তাদের অর্থনীতি ধ্বংসের কাজটা করতে হবে।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াত শিবিরের অপকর্মের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। জামায়াত শিবিরের যে মূল রাজনৈতিক দল, তারা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ফোর্স। সুতরাং তাদের তো রাজনৈতিক অধিকারই ছিল না। পরে তাদের রাজনৈতিক অধিকার আবার নিয়ে আসা হলো। আজ জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হলো। কিন্তু এই নিষিদ্ধের পুরো কাজটা আপনি কীভাবে করবেন- তার ওপর নির্ভর করছে সত্যিকার অর্থে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি না? তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভিত্তি শেষ হবে কি না? তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি শেষ হবে কি না? একটা কথা পরিষ্কার, দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে লাভ নেই। নিষিদ্ধ করতে হবে তাদের রাজনৈতিক আদর্শ। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন হলেই সেখানে বিরোধী দল বা জামায়াতের তকমা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এ কারণে বিষয়টা আজ ডালভাতের মতো হয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলে না। কোটা আন্দোলন ঘিরে যে শত শত মৃত্যু হলো, তার মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শ্রমজীবী মানুষ। সবার ব্যাপারে ঢালাও মন্তব্য করলে হবে না।