বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্য দিয়ে পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে সংস্কার এনে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার ব্রত নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারে জায়গা করে নিয়েছে ছাত্ররাও। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত এ সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক। আলোচনা চলছে সর্বত্র। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, অনেক রক্তক্ষয় ও প্রাণ ক্ষয়ের পরে দেশে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা ড. ইউনূসের মতো নোবেলজয়ী বিশ্বের সম্মানিত ব্যক্তির নেতৃত্বে তরুণ-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত এ নতুন সরকার দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। বিগত দিনে যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে, সেগুলো শুধরে নিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোয় সংস্কার এনে মানুষকে একটা বৈষম্যহীন সুন্দর জীবন উপহার দেবে তারা। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব বাংলাদেশিকে এক করে দেখবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কিছু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা টার্গেট হয়েছে। আবার ১৯ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত কোটা আন্দোলন বা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অনেকে আত্মাহুতি দিয়েছেন, রক্তক্ষয় হয়েছে, অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, অন্ধ হয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ রক্তপাত আর চাই না। দেশে রক্তক্ষয়ী পরিবর্তনের সংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি আর যেন না হয়। আমরা যেন ঝুঁকিমুক্ত সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারি। সেই সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখতে হবে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। কেউ যেন অবহেলিত, নিগৃহীত না হয়। সবার রুজি-রুটির সংস্থান করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে নিয়ে সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেওয়াই যেন লক্ষ্য হয়। এ পরিবর্তনের লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করতে হবে। কাউকে বাদ দিলে কাজটা অসম্পূর্ণ হয়। সেটা টেকসই হয় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেছেন, নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তো বিশাল। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আগে জঞ্জালগুলো দূর করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সততা, দক্ষতা প্রশ্নাতীত। সারা দুনিয়ায় উনার ব্যাপক পরিচিতি। উনার কাছে মানুষ শুধু প্রত্যাশাই নয়, মানুষ বিশ্বাস করে যে, উনি অনেক অবদান রাখতে পারবেন। উনার সঙ্গে সব বয়সি মানুষ আছেন। তারাও অত্যন্ত বিচক্ষণ। তাদের কারও সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনেককে চিনি। তাদের অনেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে ছিলেন। সেই সব জায়গায় তারা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সততার নিদর্শন রেখেছেন। এক কথায় ‘এক্সিলেন্ট গ্রুপ অব পিপল’। এ ছাড়া তরুণ রক্ত, যারা অর্জনটা এনে দিল, তারাও এ সরকারে আছেন। প্রবীণদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তারা কাজ করছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। এ তরুণ প্রজন্ম অনেক দায়িত্বশীল। রাস্তাঘাটে ছেলে-মেয়েরা যেভাবে অবদান রাখছে, এটাই সত্যিকার বাংলাদেশ। নতুন একটা বাংলাদেশ। এতেও আমি দারুণভাবে আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমরা আরও সুন্দর একটা বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছি। সেই প্রত্যাশা পূরণে নতুন সরকারের চেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তরুণরা আমাদের ভবিষ্যৎ। এরা অত্যন্ত মেধাবী। এদের মধ্যে যারা বেশি মেধাবী তারাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়। তারা একটা উদাহরণ তৈরি করেছে আমাদের জন্য। তাদের চিন্তা- চেতনাকে সম্মান দিতে হবে।
তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সময়ের ব্যাপারটা এখনি আলোচনায় আসা উচিত না। মূল লক্ষ্য হলো সুন্দর একটা বাংলাদেশ। যথাসময়ে আমাদের গণতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটবে। ড. ইউনূস ও তাঁর সঙ্গে যারা আছেন তাঁরা বুঝবেন একটা সুন্দর সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে তাদের কতদিন থাকতে হবে। কীভাবে সুন্দর দেশ গড়ে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে সেটা তারা বুঝবেন। এটা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত হবে না।