স্বর্ণ চোরাচালানের দুই মাফিয়া গোয়েন্দা নজরদারিতে। এদের একজন হলেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। অপরজন ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স এবং শারমিন জুয়েলার্সের মালিক এনামুল হক খান ওরফে দোলন। তাদের বিরুদ্ধে দুবাইভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন সোনা চোরাচালানের ৮৩ সিন্ডিকেট। তবে দিলীপ কুমার আগারওয়ালার বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান ছাড়াও ডায়মন্ড চোরাচালান থেকে শুরু করে খুনের অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। এমপি আনার হত্যা মামলার তদন্তে তার নাম বেরিয়ে এলেও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হস্তক্ষেপে তার নাম প্রকাশ্যে আনেননি গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যত সোনা ধরা পড়ছে, তার কয়েক গুণ বেশি সোনা পাচার হচ্ছে। দেশের অবৈধ সোনার এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বাজুসের সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলন এবং দিলীপ আগারওয়ালা। ইতিপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারের তথ্য দিয়েছে দুবাই ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। নজরদারিতে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশনও। তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্বর্ণ চোরাচালানের এই দুই মাফিয়া ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না স্বর্ণ পাচার।
কে এই দিলীপ কুমার আগারওয়ালা
জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগারওয়ালা। দুই দশকের ব্যবধানে তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নব্বইয়ের দশকে ঢাকার ভাড়া বাসায় থাকা দিলীপ কুমার থাকেন এখন শত কোটি টাকার বাড়িতে। মধ্যবিত্ত পরিবারের দিলীপ এখন সোনা ও হীরা চোরাচালান, রাজস্ব ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের শতাধিক শোরুম রয়েছে। বৈধ আয়ের চেয়ে অবৈধ সম্পদের পরিমাণই বেশি। ইতিপূর্বে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সোনা এবং ডায়মন্ড চোরাচালান ও বিদেশে অর্থ পাচারের ভয়ংকর তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগারওয়াল বিদেশ থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণ ও হীরা আমদানি করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শুল্ক বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করে তার অবৈধ কর্মকা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, মেসেনটেট নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বিক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথাকথিত হীরা বানিয়ে তা অলঙ্কার হিসেবে বিক্রির প্রতারণা চালানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কিছু দিন ব্যবহারের পর এগুলো কালো হয়ে যায়। নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করে দিলীপ কুমার আগারওয়াল গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রায় ১০০টির কাছাকাছি শোরুম অল্প কয়েক দিনের মধ্যে স্থাপন করেন। তিনি কুষ্টিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মেগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, জাত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আগরওয়ালা সম্প্রদায়ের প্রায় সবারই কলকাতায় ‘গদিঘর’ নামে ব্যবসায়িক ঠিকানা রয়েছে। বংশানুক্রমেই তারা সীমান্ত ডিঙিয়ে এপার-ওপার যাতায়াত আর নানা পণ্য সরবরাহ ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। সীমান্ত এলাকার বিজিবি সোর্সদের ভাষায়, মাড়োয়ারিদের অনেকেই ছিচকে স্মাগলিং কর্মকান্ডে জড়িত থাকেন। প্রায়ই মালামালসহ বর্ডার এলাকায় ধরাও পড়ে তারা, তবে বিশেষ সহানুভূতিতে ছাড়া পেয়ে যান তারা।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা বাঁধাই করে তার প্রতিটি শো-রুমে টানিয়ে অবৈধ ও ভুয়া ডায়মন্ড ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। নিজেকে খুব ক্ষমতাবান জাহির করে আসছেন দিলীপ কুমার। সূত্র জানায়, এ দেশে অবৈধ পথে ব্যবসা করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেন দিলীপ কুমার।
দুই দশকেই আকাশ-পাতাল ব্যবধান
চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয়ভাবে মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের সন্তান হিসেবেই পরিচিত দিলীপ কুমার আগরওয়ালা মাত্র দুই দশকেই আমূল বদলে নিয়েছেন নিজেকে। একদা জীবনযুদ্ধে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হওয়া দিলীপ কুমার ধূর্ততা, প্রতারণা, অপরাধমূলক কলাকৌশলকে পুঁজি করে আজ সম্পদ প্রাচুর্যের পাহাড় জমিয়েছেন। তার পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গায় সরেজমিন অনুসন্ধানকালেও নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দিলীপ কুমার আগারওয়ালার রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমতো আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় দিলীপ কুমার আগারওয়ালার পরিচিত মহলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রজীবন শেষে বন্ধুদের সঙ্গে যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সে সময় তার বাবা অমিয় আগারওয়ালার ছিল সিনেমা হলের (রূপছায়া বর্তমানে পান্না সিনেমা হল) ব্যবসা। তাতে আগারওয়ালা পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা খুব একটা ছিল না। সিনেমা হলের ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি সিনেমা হল সংলগ্ন জায়গা জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েই চলত সংসারের খরচ। চুয়াডাঙ্গায় পার্টটাইম ঠিকাদারি আর সিনেমা হলের ব্যবসায় সফলতা আনতে না পেরে দিলীপ পাড়ি জমান ঢাকায়।
জীবিকার সন্ধানে দুই দশক আগে চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমানো দিলীপ কুমার বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে আমূল বদলে নিয়েছেন। তার আস্তানায় এখন দেশি বিদেশি হরেক রকম ধনকুবের, স্মাগলার, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভিড় লেগেই থাকে। অঢেল সহায়-সম্পদ তার। ভারতের কলকাতা, বোম্বে এবং জয়পুরে তার আলীশান বাড়ি রয়েছে। অস্ট্র্রেলিয়ায়ও আছে প্রাসাদপম স্থাপনা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও অস্ট্র্রেলিয়ার নাগরিকত্ব রয়েছে তার। আছে একাধিক পাসপোর্ট। তার দাপটের কোনো কমতি নেই।
জানা যায়, এই চোরাকারবারি আগারওয়ালা ব্যাংকের পরিচালক হয়ে ব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে কৌশলে ঋণ করে বিদেশে পাচারসহ গুলশানের অভিজাত দুটি ভবনে কিনেছেন সাতটি ফ্লোর। রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেনের উৎস ও অর্থ পাচারের ঘটনা খুঁজে দেখলেই দুর্নীতির ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যাবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত মডেল পিয়াসা ও পাপিয়ার সঙ্গে রয়েছে তার মাদকের বিস্তর নেটওয়াক।
কলকাতায় আওয়ামী লীগের এমপি আনার হত্যার তদন্তে সোনা চোরাকারবারি দিলীপ আগারওয়ালার নাম বেরিয়ে আসে গোয়েন্দা তদন্তে। কিন্তু তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তার নাম প্রকাশ্যে আসেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার নাম ধামাচাপা দেন গোয়েন্দারা। সোনা চোরাচালান নিয়ে আনারের সঙ্গে দিলীপের দ্বন্দ্ব ছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
আরেক মাফিয়া এনামুল হক খান
ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স নামের একটি স্বর্ণালংকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক এনামুল হক খান দোলন। চোরাচালানের রহস্য উন্মোচনের জন্য দোলনকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মজুদ সব স্বর্ণের হিসাব জমা দিতে ইতিপূর্বে নির্দেশ দিয়েছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দোলন রাজধানীর চোরাই স্বর্ণালংকার ব্যবসার অন্যতম হোতা। বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘিরে তার অবৈধ স্বর্ণালংকার ব্যবসার শাক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চোরাকারবারের মাধ্যমে তিনি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন তিনি অবৈধ কারবার চালিয়ে গেলেও এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিন রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে দেখা যায়, নিচতলা ও দোতলায় সারি সারি স্বর্ণালংকারের দোকান। চাকচিক্যময় ও আলো ঝলমলে দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ডিজাইনের স্বর্ণালংকার। দোতলায় ১৫/এ নম্বরের দোকানটির দরজা মাত্র দুই ফুট। আশপাশের দোকানের কর্মচারীরা জানান, এটির মালিক এনামুল হক দোলন। নিচতলায় শারমিন জুয়েলার্স নামে তার মূল শোরুম। দেখা যায়, অন্য সব দোকান থেকে ‘ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স’ একেবারেই ভিন্ন। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের অন্য সব দোকান স্বচ্ছ কাচঘেরা হলেও ছোট এই দোকানটির কাচের দরজায় ব্লাইন্ড পেপার সাঁটানো। ফলে বাইরে থেকে ভিতরের কিছুই দেখা যায় না। দোকানে ঢুকে দেখা যায়, ভিতরে কোথাও স্বর্ণালংকারের ডিসপ্লে নেই। কয়েকটি টেবিলের ওপর দাঁড়িপাল্লা, নিক্তি ও মিটার রাখা। দেখে বোঝা যায়, বাইরে স্বর্ণের দোকানের সাইন বোর্ড থাকলেও ভিতরের চেহারা ভিন্ন। সাজসজ্জা দেখে মনে হয়, এটা একটা অফিস। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ডায়মন্ড ডিভার্স নামের দোকানটি ‘বাংলা গোল্ড’ নামে পরিচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় গোল্ড হাউসের দরজা বন্ধ রাখা হয়।
ভিতরে নিক্তি বা মিটার নয়, রীতিমতো বড় দাঁড়িপাল্লায় স্বর্ণালংকার মাপজোখ করা হয়। এখানে ভরিতে নয়, স্বর্ণালংকারের পাইকারি বেচাকেনা হয় কেজি হিসেবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কেজি বা মণ হিসেবে স্বর্ণ বেচাকেনা করলেও এ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আমদানি খাতা প্রায় শূন্য। কয়েক বছরের রেকর্ড খুঁজেও তাদের ১০ কেজি স্বর্ণ আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানি না করেও শারমিন জুয়েলার্সের জমজমাট পাইকারি ব্যবসার খোঁজ করতে গিয়ে দুবাইভিত্তিক চোরাচালানের খবর পাওয়া যায়।
তিনি প্রায়ই কলকাতা হয়ে দুবাই যাতায়াত করছেন। দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে উঠে আসে তিনি দুবাইয়ের স্থায়ী আবাসিক কার্ডধারী। এ জন্য দুবাই বিমানবন্দরে তিনি বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে সহজেই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাতায়াত করতেন পারেন। সূত্র জানায়, চোরাই স্বর্ণের ব্যবসা করে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন দোলন। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও তার ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে।
গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতেও তিনি পাঁচ তারকা হোটেল স্টাইলে অভিজাত বাংলো বানিয়েছেন। এই বাড়ি নির্মাণের জন্য যাবতীয় ফিটিংসহ গৃহসজ্জার উপকরণ আনা হয় দুবাই ও ইতালি থেকে। নরসিংদী শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে মনোহরদী উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের খারাব গ্রামে এনামুল হক দোলনের বিশাল বাংলো।
বিলাসবহুল অত্যাধুনিক বাংলোটির সামনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরা থাকে। চারদিকে লেকবেষ্টিত নিরাপত্তাঘেরা বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, খোরশেদ আলম নামের এক সহযোগীর মাধ্যমে দুবাইসহ কয়েকটি দেশে হুন্ডি ব্যবসা ও সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন দোলন।
সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে স্বর্ণালংকার আনা হয় যাত্রীদের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায়। চোরাচালান জগতে এ পদ্ধতিকে ‘প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার’ বলা হয়। দুবাই ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও স্বর্ণালংকার আনতে ‘প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার’ ব্যবহার করা হয়। মূলত আকাশপথেই স্বর্ণালংকার চোরাচালান হয়ে থাকে।
এ পদ্ধতির প্রথম ধাপে দুবাই অথবা সিঙ্গাপুরের বড় বড় স্বণালংকারের দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা পছন্দ করে রেখে আসে চোরাচালানিরা। এর পর ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে ঢাকা অভিমুখী যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। স্বর্ণের গহনা বহনের শর্তে যাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে ডিসকাউন্টের বাইরে অতিরিক্ত নগদ টাকাও দেয় ট্রাভেল এজেন্ট।
এভাবে প্রতি যাত্রীকে ১০০ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার বহন করতে দেওয়া হয়। বহনে সুবিধা থাকায় নারী যাত্রীদের দেওয়া হয় ৩০ ভরি পর্যন্ত। এভাবে স্বর্ণালংকার এনে ডিসকাউন্টে টিকিট বা নগদ অর্থ পাওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই খুশি থাকেন। দুবাই, সিঙ্গাপুর গেলে অনেক যাত্রী নিজে থেকে যোগাযোগ করে স্বর্ণালংকার এনে চোরাকারবারিদের কাছে দেন। জানা গেছে, বিদ্যমান আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। আর এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন এনামুল হক খান।