ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক জোরদারের বার্তা দিয়ে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করবে। পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করবে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ বার্তা দেন মার্কিন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি যৌক্তিক সময়ের পরে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স বলেন, মার্কিন সরকারপ্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে পেরে খুশি এবং একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। তিনি আরও জানান, ভিসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এই সপ্তাহে তাদের কনস্যুলার পরিষেবা পুনরায় চালু করবে। চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স বলেন, হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম, শাসন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে তার দেশ। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন রোহিঙ্গাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন শুরু করেছে। প্রক্রিয়াটি দ্রুত হবে বলে তিনি আশা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বছর রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্যসহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসকারী ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য অব্যাহত অর্থায়নসহ বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া বাংলাদেশে বন্যা মোকাবিলায় দাতাদের সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করার বিষয়েও আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। সৌজন্য সাক্ষাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রসঙ্গও উঠে আসে। মার্কিন চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স বাংলাদেশের শ্রম খাত ও সংখ্যালঘু বিষয় নিয়ে তার সরকারের উদ্বেগের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক ‘সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত’। অন্তর্বর্তী সরকার সব নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অভিনন্দন জানিয়ে ফোন জাতিসংঘ শরাণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের : জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের পুনর্গঠনে ‘একটি অবিশ্বাস্য দায়িত্ব’ নিয়েছেন। গতকাল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে ফোনে এ মন্তব্য করেন ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার মানুষসহ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন ইউএনএইচসিআর। টেলিফোনে আলাপকালে বাংলাদেশের ক্যাম্পে বসবাসকারী ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশের শিবিরে বেড়ে ওঠা তরুণ রোহিঙ্গা শিশুদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তেও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার সহায়তা চান তিনি। ইউএনএইচসিআর প্রধান উপদেষ্টাকে নিউইয়র্কে আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া চলতি বছরের অক্টোবরে তাঁর বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার কথাও অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টাকে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মানবাধিকার আইনজীবী ক্যাডম্যানের সাক্ষাৎ : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাৎকালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি দেশীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টার কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করার সময় টবি ক্যাডম্যান জানান, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে একটি কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তাঁর প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে পেশ করতে বলেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় যারা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিল এবং পরিচালনা করেছিল তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচারের আওতায় আনতে তাঁর সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলার দেশে ফিরিয়ে আনা।