জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র শাসন করবেন।
গতকাল রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া সভাপতির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসহ সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এ সময় শত শত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ পরিবর্তনকে কেউ যাতে ব্যর্থ করে দিতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। জামায়াতের আমির আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার সরকার সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছিল। এ গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই। তিনি বলেন, দল হিসেবে সাড়ে ১৫ বছর আমাদের সঙ্গে যে বৈরিতা করা হয়েছে তা অবর্ণনীয়। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অফিসগুলোতে তালা ঝোলানো হয়েছে। আমাদের স্বস্তির সঙ্গে চলতে দেওয়া হয়নি। দফায় দফায় আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিশাহারা হয়ে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তারা তাদের কলিজা ঠান্ডা করেছে। কিন্তু আমরা বলেছি, প্রতিশোধ নেব না। এ প্রতিশোধ না নেওয়ার মানে হচ্ছে আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অপরাধ যিনি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলাও হবে এবং তাকে সে মামলায় শাস্তিও পেতে হবে। ধনী-ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের বিচার এবং তাদের ক্ষমা না করার ওপর জোর দিয়ে জামায়াতের আমির আরও বলেন, গরিব দেশের কিছু চতুর ধনী জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দেশের বাইরে অর্থ নিয়ে গেছে। এ অর্থ ১৮ কোটি মানুষের। এদের আইনের আওতায় এনে অর্থও ফিরিয়ে আনতে হবে। এদের কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না।
শফিকুর রহমান বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্যের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের অনেককেই ফাঁসির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপরও একইভাবে নির্যাতন হয়েছে। শাপলা চত্বরে যা হয়েছে তা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতারা দম্ভ নিয়ে বলতেন। তাতেই স্পষ্ট হয় সেদিন কতটা নৃশংসতা চালিয়েছিল তারা। ধর্মীয় অধিকার পর্যন্ত সেখানে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। জামায়াতের আমির বলেন, যে কোনো মূল্যে গদি টিকিয়ে রাখতে হবে, এই জেদ ধরে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। এটা ছিল সুস্পষ্ট গণহত্যা। শুধু স্থলভাগে নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালানো হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে-তাদের লাশ গুম করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আশুলিয়ায় ভ্যানভর্তি মানুষের মৃতদেহের ভিডিও আমরা দেখেছি। সেখানে ভ্যানের ওপর লাশের স্তূপ। তারপর ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। আমরা কোন সভ্যতায় বসবাস করছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব, এ গণহত্যা যারা সংঘটিত করেছে, অবশ্যই তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।