মাত্র চার মাসের ব্যবধানে নতুন এক পরিস্থিতিতে আজ ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া ডোলান্ড লুর এবারের সফর অন্য সব সময়ের চেয়ে আলাদা। দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন ডোনাল্ড লু। তাঁর সফরের আগে-পরের সময়টা ঢাকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ছিল ‘লু হাওয়া’ হিসেবেই। এবার পশ্চিমা বিশ্বের মিত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এ ‘লু হাওয়া’ আসছে স্বস্তি নিয়ে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এবারের সফর হবে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার। তাই মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। প্রতিনিধি দলে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে আরও থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড। সফরসূচি অনুসারে, ইতোমধ্যে নয়াদিল্লি সফরে থাকা প্রতিনিধি দলটি দুই দিনের জন্য আজ শনিবার ঢাকা পৌঁছাবেন। ঢাকায় তারা আগামীকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রতিনিধি দলটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন ছাড়াও অন্যান্য উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন মার্কিন ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। অন্তর্বতী সরকার গঠনের মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। নতুন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে আমেরিকার প্রতিনিধি দলের সফরের মধ্য দিয়ে আমেরিকা যে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় তার একটা বড় প্রতিফলন। সফরের প্রতিনিধি দলের কম্পোজিশনেই বোঝা যায়, আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা চাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়ায়। তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে বিষয়গুলোতে সামনের দিনে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান ব্রেন্ট নেইম্যান সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা দূর করতে সক্ষম হবে। নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারবে বাংলাদেশ। তিনি জানান, আইএমএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পৃক্ততা, যুক্তরাষ্ট্র তাতে সমর্থন দেবে। আর্থিক খাতের গভীর সংস্কার, দুর্নীতি হ্রাস ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চায়, তাতেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঢাকার সঙ্গে নিরাপত্তাসহ আইপিএস ইস্যুতেও আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে ওয়াশিংটন। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, অর্থনীতি-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণে কৌশলী ও ভারসাম্যের নীতি বজায় রাখার বিষয়ে চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। জানা যায়, সর্বশেষ গত মে মাসে মার্কিন একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকা সফর করেছিলেন ডোনাল্ড লু। তার আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসে ডোনাল্ড লু সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সেই পরামর্শ অগ্রাহ্য করে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপও হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও তার জোট সঙ্গীরা সেই নির্বাচন বয়কট করে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।