আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল দিনটি মুসলিম বিশ্ব পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে। এই দিনে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ও আল্লাহর প্রিয় হাবিব, নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেন। ৪০ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহর তরফ থেকে তাঁর ওপর প্রথম ওহি নাজিল হয় ‘ইকরা বি-ইসমে রাব্বিকাল্লাজি খালাক’। এরপর পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেন। ৬৩ বছরের ব্যবধানে একই দিনে আল্লাহর প্রিয় হাবিব ও দোজাহানের নবী ওফাত লাভ করেন। মুসলমান হওয়ার আনন্দ বুকে ধারণ করে এবং উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে নবীজির প্রতি কৃতজ্ঞতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটি।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আজ সকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জশনে জুলুস ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন এ উপলক্ষে কোরআনখানি, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, হাদিস শরিফ পাঠ, নফল নামাজ, ইবাদত বন্দেগি ও কবর জিয়ারত করে দিনটি পালন করবেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন প্রস্তরকঠিন; কিন্তু ক্ষমা ও দয়ায় ছিলেন পানির মতো সরল। তাঁর প্রতিটি কথা ও কর্মই মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। এ জন্য পবিত্র কোরআনে তাঁর জীবনকে বলা হয়েছে ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ অর্থাৎ সুন্দরতম আদর্শ। বাণীতে তিনি মহান আল্লাহর দরবারে মহানবী (সা.) এর সুমহান আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বজগতের হেদায়েত ও নাজাতের জন্য ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সারা জাহানের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহানবী (সা.) মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে; প্রতিটি ভূমিকায় বিশ্ব মানবতার জন্য অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন; যা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারি হিসেবে পথ দেখাবে। বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলা রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা হয়। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে। সে সময় আরবের সমাজ ছিল পৌত্তলিকতা, ঠুনকো অজুহাতে হানাহানি-মারামারি, নারীর ছিল না কোনো অধিকার, কন্যাসন্তান হলে অভিশাপ হিসেবে তাকে হত্যা করা হতো। ইতিহাসে ‘আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ’ বলে সেই সময়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই অন্ধকার সময়ে মহানবী (সা.) এসেছিলেন আলোকবর্তিকার মতো। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতাসহ অনুপম চারিত্রিক গুণাবলি, অপরিমেয় দয়া সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতার মতো মহৎ গুণের জন্য আরব সমাজের সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। নবুয়ত লাভের আগেই ‘আল-আমিন’ অভিধায় তাঁকে সম্মানিত করেছিল আরব সমাজ। হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থেকে তিনি ৪০ বছর বয়সে ওহি লাভ করেন। এরপর পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেন। আল্লাহর প্রতি অসীম ও অতুলনীয় আনুগত্য এবং ভালোবাসার পাশাপাশি মহৎ মানবিক চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি সর্বকালে সর্বজনের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল বাদ মাগরিব জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্ব গেটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, কিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও আটটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।