পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ শুরু হচ্ছে ভোট। বাংলাদেশ সময় এদিন সন্ধ্যা ৭টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হবে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে। গণনা শুরুর পর ফলাফল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে এদিন সন্ধ্যারাতের মধ্যে। চূড়ান্ত ফলাফল পেতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার। দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে কমলা হ্যারিসের গাধা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতি প্রতীকের জয়পরাজয়। এরই মধ্যে ৮ কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ভোট গ্রহণ হলেও কবে জানা যাবে চূড়ান্ত ফলাফল, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের মাঝে। নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে। সাধারণত যেসব রাজ্যের ভোট দ্রুত গণনা হয়, সেসব রাজ্যের ফল রাতেই (বাংলাদেশে বুধবার সন্ধ্যারাতের দিকে) পাওয়া যেতে পারে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজেদের নিয়ম অনুযায়ী ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করে থাকে। এর পর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে সাধারণত স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভোট গণনা শুরু হয়। সময়ের ব্যবধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনার সময়ে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে যখন ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়, আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনো ভোট দিতে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৬৩ হাজার ২৩৯। এর মধ্যে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত ১৮ কোটি ৬৫ লাখ। নিবন্ধিত ভোটারের ৪৭ ভাগ নিজেদের দলগতভাবে চিহ্নিত করেছেন অর্থাৎ ৪৫.১ মিলিয়ন হচ্ছেন ডেমোক্রাট, ৩৬ মিলিয়ন রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক। এর বাইরে রয়েছেন গ্রিন পার্টি, স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য। এ তথ্য মাসখানেক আগের। এরই মধ্যে আরও কিছু মানুষ নিজেকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন। আজ যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে লক্ষাধিক কেন্দ্রে। বিজয়ী হবেন ৪৭তম প্রেসিডেন্ট। রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিসের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসের মধ্যেই শুরু হচ্ছে ভোট গ্রহণ। উত্তেজনাও রয়েছে ভোট ডাকাতি, কারচুপি এবং প্রতারণার নানা অভিযোগ নিয়ে। জাল ভোটের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি করা হচ্ছে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। তবে এবারের নির্বাচনে আগাম ভোট অধিক মাত্রায় পড়ায় উভয় প্রার্থী কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ ভোটের দিন দোদুল্যমান স্টেটসমূহসহ বেশ কটি এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হবে বলে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়। আবহাওয়া যতটা দুর্যোগপূর্ণই হোক দলীয় সমর্থকরা পুরো প্রস্তুতি রেখেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক রাখা হয়েছে আগের রাত থেকেই। এবারের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব এবং মুরুব্বিয়ানা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় দলগত ভোটাররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। গাজা, লেবানন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কমলা হ্যারিসের প্রতি ডেমোক্র্যাটদের ভোটব্যাংকে ধস নেমেছে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ট্রাম্পের জঙ্গি আচরণের প্রভাবে বিরক্ত রিপাবলিকান পার্টির অনেক ভোটার। আর এমন একটি পরিস্থিতির প্রভাব গত তিন মাসে পরিচালিত অধিকাংশ জরিপে দৃশ্যমান হয় এবং বিজয় মুকুট কার ভাগ্যে জুটবে তা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়নি। ফলে ভোট গণনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত ফলাফল জানতে। যদিও গত রবিবার প্রচার চলাকালে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে বলেছেন, গণনার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে আবারও তুলকালাম শুরু করতে পারেন। একই দিনে আরেক নির্বাচনি সমাবেশে ট্রাম্প ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ এবার ফলাফল তাঁর বিরুদ্ধে গেলেও তিনি হোয়াইট হাউসে ঢুকে পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে ডেমোক্র্যাটরা মনে করছেন। গতকাল ভোটের আগের দিন কমলা এবং ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া স্টেটে প্রচার সমাবেশে ভোট প্রার্থনা করেছেন। কারণ এ স্টেটের ভোটারাই মূলত বিজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানকার মুসলিম ও ল্যাটিনো ভোটারদের ভূমিকা জয়পরাজয়ে প্রবল রয়েছে।