নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের আকার বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও রদবদল আনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আরও তিনজন উপদেষ্টা। এরা হলেন- ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারা, নতুন উপদেষ্টাদের পরিবারের সদস্য, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে সেখ বশির উদ্দিন আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিনের ছেলে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণ করে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব ছিলেন। শপথ নেওয়া আরেক উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি এতদিন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজীয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে¡ অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ওই সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১৬ জন এবং দ্বিতীয় দফায় আরও চারজন উপদেষ্টা সরকারে যুক্ত হয়ে মোট ২১ জন হয়েছিল। সরকারের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে উপদেষ্টা পরিষদে আরও সদস্য নিয়োগের পরামর্শ আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। এখন নতুন এই তিনজন উপদেষ্টা মিলিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা দাঁড়াল ২৪-এ। এদিকে, গতকাল মন্ত্রিপরিসদ বিভাগ থেকে উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয়/বিভাগ পুনর্বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা এই মন্ত্রণালয়/বিভাগ পুনর্বণ্টন করেছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। এতে করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে আগে ছয়টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব থাকলেও দুটি কমানো হয়েছে। এখন প্রধান উপদেষ্টার হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রয়েছে। খাদ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। সালেহউদ্দিন আহমেদের হাতে থাকা অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছিল তবে বর্তমানে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় রাখা হয়েছে। ড. আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাসান আরিফকে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন আরেক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
খোদা বকশ চৌধুরী, ড. সায়েদুর রহমান ও প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলামকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের যথাক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। গতকাল রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই তিন ব্যক্তিকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগদান করেছেন। বিশেষ সহকারী পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তারা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতাদি এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।