বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান ইস্যু ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছেই। এর মাঝেই ভারত ইস্যুতে ঢাকার কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। তাঁরা বলছেন, ভারতের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অখণ্ডতার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত, এটা ভারতের ভুলে গেলে চলবে না। এ ঐক্যবদ্ধ, মর্যাদাবান এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে শত্রু বানানো উচিত নয় ভারতের। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। তবে এটা দুই দেশকেই চাইতে হবে।’ সে লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর এফওসির জন্য নির্ধারিত থাকলেও এটি এক দিন আগে ৯ ডিসেম্বর হতে পারে। উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী নিজেদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। আলোচনায় ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ এবং ভিসাসংক্রান্ত বিষয়সহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ এদিকে ফেসবুক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভারতের স্থিতিশীলতা ও অখ তা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অখ তার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত, এটা ভারতের ভুলে গেলে চলবে না। পাশাপাশি বাংলাদেশবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী রাজনীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থে অবদান রাখবে না।’ এজন্য ভারতকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি সম্প্রীতি ও সম্মান বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো বিভাজনমূলক রাজনীতি ও বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যে লিপ্ত। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং ছাত্রদের রাজনৈতিক জাগরণকে হুমকি হিসেবে দেখে। ফলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গণ অভ্যুত্থানের সময় কলকাতা ও দিল্লির ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ভারতের শাসকগোষ্ঠী এ ধরনের গণতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা জোর দিয়ে আসছি যে, ভারত সরকারকে বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা বন্ধ করতে হবে। ন্যায়, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি নতুন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। সেটা না করে দিল্লি সংখ্যালঘু নিপীড়নের ধুয়া তুলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও দেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের আমলেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সর্বোচ্চ নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছে। তবু দিল্লি নিঃশর্তভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। বর্তমান সরকার হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূর্ণ নাগরিক অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অথচ ভারত তার নিজের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিপীড়নকারী ও গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়েছে। গণহত্যা ও শিশুহত্যার জন্য দায়ী পলাতক শেখ হাসিনাকে আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ভারত সরকার অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষুণœ করার ঝুঁকিতে রয়েছে।’ অন্যদিকে পৃথক ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘ভারতের উচিত দ্ব্যর্থহীনভাবে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থান এবং শিক্ষার্থী-জনতার গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া। দুই দেশের মাঝে সম্পর্ক শুরুর জন্য এটিই প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। জুলাই অভ্যুত্থান উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করা উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের মিত্ররা ভাবছেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে এবং জুলাই অভ্যুত্থান ও ফ্যাসিস্টের নৃশংসতা এড়িয়ে গেলে কিছু হবে না। এটি ভুল ধারণা। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী এ অভ্যুত্থানকে একটি জঙ্গি, হিন্দুবিরোধী ও ইসলামপন্থি ক্ষমতা দখল হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের প্রচার এবং উসকানি ব্যর্থ হচ্ছে।’
সরকারের এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ভারতের ’৭৫-পরবর্তী কৌশল পরিবর্তন করে নতুন বাংলাদেশের বাস্তবতা উপলব্ধি করা উচিত। এটি আর ’৭৫-এর মতো পরিস্থিতি নয়। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ছিল একটি গণতান্ত্রিক, প্রজন্মের এবং দায়িত্বশীল সংগ্রাম। এ সংগ্রাম দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকবে। দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা!, মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু! স্লোগানগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এ ঐক্যবদ্ধ, মর্যাদাবান এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে শত্রু বানানো উচিত নয় ভারতের। ’৭১-পরবর্তী সময়ে আমরা একটি রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ হয়েছিলাম, কিন্তু এবার নয়।’