বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনীতির ক্যাপিটালই হলো জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস। জনগণের এই আস্থা ও বিশ্বাস যে কোনো মূল্যে আমাদের ধরে রাখতে হবে। সেজন্য যার যার দায়িত্ব সেটিকে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবই কিন্তু শেষ না, এটি কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ না যে এটিকে পরিবর্তন, সংস্কার কিংবা সংযোজন করা যাবে না। আরও ভালো প্রস্তাব পেলে অবশ্যই যুক্ত করা যাবে। আমরা চাচ্ছি দেশটাকে পুনর্গঠন করতে। গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর, রংপুর এবং বরিশাল বিভাগে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক কর্মশালায় পৃথকভাবে প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি খিলক্ষেত এলাকায় বড়ুয়া আলাউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় ময়দানে এই কর্মশালার আয়োজন করে। খিলক্ষেত থানা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী ফজলুল হক ফজলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, মহানগর উত্তর সদস্যসচিব হাজী মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আক্তার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গির, ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি প্রমুখ। বরিশাল ও রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদকরা জানান, সন্ধ্যায় বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বরিশাল বিভাগের কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ড. মাহদি আমিন, বিএনপি নেতা মাহবুবুল হক নান্নু, নেওয়াজ হালিমা আরলি, মাহমুদা হাবিব, মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু। বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, দলের মিডিয়া সেলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল প্রমুখ। কর্মশালাগুলোতে তারেক রহমান বলেন, দেশকে কীভাবে পুনর্গঠন করতে চায় বিএনপি তারই অংশ হিসেবে ৩১ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাব শুধু দলীয় কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, প্রতিটি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি কারও তাতে আপত্তি বা প্রস্তাবনা থাকে তাহলে ৩১ দফা থেকে সংস্কার কিংবা সংযোজন করা হবে। বিএনপির ওপর জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে দলের নেতা-কর্মীদেরই। তিনি বলেন, হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনি মানুষও সবাই একরকম হয় না। ৫ আগস্টের পর গত চার মাসে দলের কিছু নেতা-কর্মী বিভ্রান্ত হয়েছে, বিভ্রান্ত করছে। যে কারণে তাদের অনেকের কাজকর্ম সাধারণ মানুষ পছন্দ করছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের সমর্থন, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। যদি লক্ষ্য অন্যকিছু হয়ে থাকে, তবে দুই দিন পরে ছিটকে পড়ে যাবেন, জনগণের সমর্থন থেকে ছিটকে পড়বেন, তাদের আস্থা থেকে দূরে সরে যাবেন না। তাই সবাইকে জনগণের আস্থা ও সম্মান এবং সমর্থন ধরে রাখতে কাজ করতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার, চলন-বলন সবকিছু হতে হবে- দলের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী। বিএনপির প্রতি জনগণের যে ভালোবাসা, ও বিশ্বাস আছে- সেটি ধরে রাখতে হবে।
বিএনপির শীর্ষনেতা বলেন, আজকে যে আন্দোলন হয়েছে- সে আন্দোলন শুধু বিএনপি একা করেনি। আন্দোলন করেছেন দেশের সব রাজনৈতিক দল, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সর্বস্তরের মানুষ একত্রে নেমে এসেছিল বলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। এখন দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে ঠিক একইভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে নেমে এসেছিল- ঠিক একইভাবে আবারও সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, এই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবই কিন্তু শেষ না, এটি কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ না যে এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না। অবশ্যই পরিবর্তন করা যাবে। অবশ্যই এর সঙ্গে নতুন বিষয় যুক্ত করা যাবে। কোনো ব্যক্তি, কোনো সংগঠন বা কোনো দল যদি ভালো প্রস্তাবনা দেয়- অবশ্যই আমরা সেটি গ্রহণ করব। ৩১ দফার অলোকে আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয়, বিএনপি একা পারবে না। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে করতে হবে। সেজন্যই কিন্তু আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলেছি। আমরা আন্দোলনরত যে দলগুলো ছিলাম- একসঙ্গে আমরা আন্দোলন করেছি- আমরা চাই সব দলকে নিয়ে আমরা এমন একটি সরকার গঠন করতে- যেখানে সবাই মতামত রাখতে পারবেন এবং সবাই মিলে কাজ করতে পারবেন। এজন্যই আমরা ৩১ দফায় উচ্চকক্ষর কথা বলেছি। কারণ সমাজে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, কিংবা জড়িত হতে চান না। কিন্তু দেশের জন্য তারা কাজ করতে চান। দেশ গঠনে তারা ভূমিকা রাখতে চান। এর মধ্যে হতে পারেন সাংবাদিক, হতে পারেন বুদ্ধিজীবী, লেখক কিংবা চিকিৎসক, সাহিত্যিক, কবি কিংবা ব্যবসায়ী। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন। সেজন্য আমরা বলেছি- এরকম উচ্চপর্যায়ের মানুষ যারা আছেন- তাদেরকে যাতে আমরা উচ্চকক্ষে স্থান দিতে পারি। তাদের মতামত জানতে পারি এবং তারা ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার যেমন দেশটার সবকিছু নষ্ট করে দিয়ে সমাজের ভারসাম্যটাকেই নষ্ট করে দিয়েছিল। এখন তাদের কোথাও কোনো পাত্তা আছে? পাত্তাই নেই। আমরা চাচ্ছি দেশটাকে পুনর্গঠন করতে। এজন্য সবাইকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।