তিন দফা দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ মিছিল ও গণ অনশন কর্মসূচিতে গতকাল উত্তাল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। টানা ৩৫ ঘণ্টা অনশনের পর সচিবালয় ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা আগামীকাল (বুধবার) পর্যন্ত শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় সন্ধ্যা ৭টায় গণ অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী কে এম রাকিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার লিখিত চিঠি দিয়েছে। এর ফলে আমরা অনশন প্রত্যাহার করেছি। আগামী বুধবারের মধ্যে সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তাই বুধবার পর্যন্ত ক্যাম্পাস শাটডাউন থাকবে। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত একটানা অনশনরত অবস্থায় বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সচিবালয়ের সামনে। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘সব শালারা বাটপার আর্মি হবে ঠিকাদার’, ‘মুলা না ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাস ক্যাম্পাস’, ‘আমার ভাই অনশনে, প্রশাসন কী করে’, ‘ইউজিসি ইউজিসি, লজ্জা লজ্জা’, ‘কবে দিবা প্রশাসন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আবাসন’, ‘অ্যাকশান টু অ্যাকশান, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’ ‘এক-দুই-তিন-চার, ক্যাম্পাস আমার অধিকার’, ‘যদি থাকে হায়া, আর্মির হাতে দাও কাজ’, ‘আমার ভাই হাসপাতালে, প্রশাসন কী করে’! গতকাল শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিলে আশপাশের দুই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিস্তানসহ আশপাশের সব সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এজন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণকে। গণ অনশনে অংশ নেওয়া ২৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন করে প্রতিটি বিভাগ এবং ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি এবং সব প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শাটডাউনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে সারা দিন কোনো যানবাহন প্রবেশ করেনি।
এর আগে দুপুর ২টায় সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর নিয়ে সচিবালয় থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। এ চিঠি আসার পর অনশনরত শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। প্রয়োজনে স্পেশাল মিটিংয়ের মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ করতে হবে এবং ভিজ্যুয়ালভাবে সবার সামনে তা উপস্থাপন করতে হবে। পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে গত রবিবার সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গণ অনশন করেন শিক্ষার্থীরা।