ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন সময় বুধবার ওয়াশিংটনে তাদের মধ্যে এ বৈঠক হয়। জয়শঙ্কর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গেছেন। তাদের বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর নিজেই এ তথ্য জানান। তবে ওই আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে সংবাদ সম্মেলনের একেবারে শেষ পর্যায়ে জয়শঙ্করকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। আমি মনে করি না যে, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলাটা সমীচীন হবে।’ নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে বাংলাদেশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করুক। মার্কো রুবিওর সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠকের বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, য্ক্তুরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অংশীদারি জোরদার করার অভিন্ন প্রতিশ্রুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কো রুবিও ও এস জয়শঙ্কর বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও গভীর করার বিভিন্ন সুযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ও বিকাশমান প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সহায়তা, জ্বালানি এবং একটি স্বাধীন ও মুক্ত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুজনের কথা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতের সঙ্গে কাজ করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আকাক্সক্ষার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ‘অনিয়মিত অভিবাসন’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সুস্পষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এটা খুবই স্পষ্ট যে, নতুন প্রশাসন ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে ভারতের উপস্থিতি চেয়েছিল। তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
জানা গেছে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে গঠিত চার দেশীয় জোট কোয়াডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের প্রথম মেয়াদে কোয়াড উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। পরবর্তী কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন ভারতে অনুষ্ঠিত হবে। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভারত সফরের সম্ভাবনা আছে। জয়শঙ্কর জানান, ভারত ট্রাম্প প্রশাসনকে জানিয়েছে যারা অবৈধভাবে আমেরিকায় এসেছে তাদের ফেরত নেওয়া হবে। তবে ব্লুমবার্গ সংবাদ সংস্থা ১৮ হাজার ভারতীয়কে ফেরত নেওয়ার সংবাদ প্রকাশ করলেও জয়শঙ্কর কোনো সংখ্যা নিশ্চিত করেননি।