নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মাধ্যমে আরপিওর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার, বিজিবি কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ‘প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলো সংযোজন করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সরকারের সায় পেলে এর মাধ্যমে ১৫ বছর পর আরপিওতে এ সংস্কার আসবে। এদিকে সরকারের কাছে সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নির্ধারিত ছকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ। মার্চের মাঝামাঝি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো’ ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ নির্ধারিত ছকে প্রস্তাব পাঠাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুরোধ করেছিল।
গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিবের কাছে এসব প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় নতুন সংযোজনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আরপিও সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোনো বিধান আরপিওতে ছিল না। তারপরও ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও জেলা/থানা/উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়। ২০০১ সালের এক অধ্যাদেশে নির্বাচনে ‘ল’ এনফোর্সিং এজেন্সির’ সংজ্ঞায় ‘ডিফেন্স সার্ভিস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা বাদ দেওয়া হয়। আরপিওতে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত থাকায় নবম সংসদে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে সেনা মোতায়েন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন আইন, ২০০৯) আইনে কিছু কিছু এলাকায় ও চট্টগ্রামে সেনা ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংশোধিত আইনে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গত তিনটি নির্বাচন কমিশন আরপিও সংস্কারে বারবার উদ্যোগ নিলেও ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ যুক্তের সুপারিশ করেনি। বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার সুপারিশ করে। বর্তমান এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন এবার নতুন করে সুপারিশ করেছে। সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ যুক্ত করা হলে ভোটে সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে মোতায়েনের পথ প্রশস্ত হবে।
কী কী প্রস্তাব ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ : নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে ইতোমধ্যে নির্বাচনি আইনে সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় নতুন দফা, হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়া, রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, নির্বাচনি অপরাধের মামলা, মনোনয়নপত্র জমার সময় নির্ধারণ, প্রচারের সময় নির্ধারণ, দল নিবন্ধন বিধিসহ ছোটখাটো সংযোজনের প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করেছে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট করে সব বলা সম্ভব নয়। ব্যালট পেপারে জলছাপের কথা (সুপারিশ)। এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। তাই এটা আমরা আশু বাস্তবায়নযোগ্য মনে করি না। সচিব বলেন, যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন এবং আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে এ বিষয়গুলো বাদে অন্যগুলো নিয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে।