পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ালেন গাজীপুরের ইকরামুল হাসান শাকিল। বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে এবং কম বয়সি পবর্তারোহী হিসেবে নতুন রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে শাকিল এভারেস্টের শিখরে আরোহণ করেন। বর্তমানে এই পর্বতারোহী সুস্থ আছেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন ‘সি টু সামিট এভারেস্ট অভিযান ২০২৫’ বা শাকিলের এভারেস্ট অভিযানের সমন্বয়ক এবং বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং ও ট্র্যাকিং ক্লাবের সদস্য সাদিয়া সুলতানা। আগামীকাল শাকিলের এভারেস্ট বেসক্যাম্পে নেমে আসার কথা রয়েছে।
পর্বতারোহী শাকিল গত ৯ মার্চ ঢাকার গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে তার ‘সি টু সামিট’ যাত্রার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সেখানে শাকিল বলেছিলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে পায়ে হেঁটে তিনি ৯০ দিনের মধ্যে সামিট জয়ের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করেছেন। ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জের পথ ধরে তিনি তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ওপর দিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিমি দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টেও ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করতে চান বলে জানান। তবে ৯০ দিনের মধ্যে সামিট জয়ের লক্ষ্য ঠিক করলেও শাকিল ৮৪ দিনেই তা শেষ করেছেন। এতে আরেক পবর্তারোহী অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যাকার্টনির রেকর্ড ভেঙেছেন শাকিল। ম্যাকার্টনি ১৯৯০ সালে তিন মাসের বেশি সময় নিয়ে ভারতের গঙ্গা সাগর থেকে পদযাত্রা করে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন। শাকিলের এই দুঃসাহসিক অভিযানের নামকরণ করা হয়েছে ‘সি টু সামিট এভারেস্ট অভিযান ২০২৫’। এ অভিযানের মূল বিষয়বস্তু ছিল কক্সাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকতের সমুদ্র সমতল থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে আরোহণ। ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইনানী সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন শাকিল। এরপর ৬৪ দিনে প্রায় ১ হাজার ৩৭৪ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌঁছান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি সাঁতরে পার হন খরস্রোতা যমুনা নদীর প্রায় তিন কিমি। এ অভিযানে শাকিলের সহযাত্রী হিসেবে আছেন তার বন্ধু খ্যাতনামা শেরপা গাইড তাশি গ্যালজেন। তিনিও এক বিশ্ব রেকর্ডের পথে। একই মৌসুমে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে চারবার এভারেস্ট আরোহণের লক্ষ্য নিয়ে অভিযানে আছেন। ইতোমধ্যে তিনি সফলভাবে তৃতীয়বারের মতো শিখর আরোহন করেছেন।
নেপালের ১ হাজার ৭০০ কিমি দীর্ঘ ‘গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল’ সফলভাবে শেষ করে আগেও ইতিহাস গড়েছেন শাকিল। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩৩ জন অভিযাত্রী এই ট্রেইল শেষ করেছেন। যার মধ্যে শাকিলই একমাত্র বাংলাদেশি।