ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এনবিআরের এই ছয় কর্মকর্তা হলেন- আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু এবং বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও হাতিয়ার হয়ে দুদক কাজ করে না। যাচাই-বাছাই শেষেই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এনবিআরের কিছু অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তা কর এবং শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কর দাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়। অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে এই কর হিসাবনিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়- করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরও অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্ক। একইভাবে বিগত ২০-২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি। এই ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে আন্দোলন চলছে। মির্জা আশিক রানা ও শাহরীন সুস্মিতা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি। এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে একধরনের অচলাবস্থা চলছে। এতে সেবায় বিঘ্ন ঘটছে।
এর আগে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য হলো করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা।
অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব খাত সংস্কারের কথা বলে আসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্ত ছিল, রাজস্ব নীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা করা।