বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে উভয় দেশের বাণিজ্য দপ্তরের নেগোসিয়েশন বৈঠক শেষ হয়েছে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে। এটাই ছিল চূড়ান্ত আলোচনা। এতে শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২০ শতাংশের আশপাশে নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ওয়াশিংটন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে আমাদের একটি সফল আলোচনা শেষ হয়েছে। উভয় দেশই তাদের প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে। দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনার পর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর হয়তো বাংলাদেশের জন্য শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশের আশপাশে নামিয়ে আনতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা কখন আসবে এখন সে সময়ের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের শীর্ষ কূটনীতিকরাও অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল পাল্টা শুল্ক হ্রাস, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং পারস্পরিক আমদানি-বাণিজ্য সম্প্রসারণ। এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের ওপর আরও কিছু জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম -২০ শতাংশ, ফিলিপাইন -১৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া -১৯ শতাংশ, জাপান -১৫ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন -১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য -১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ২০ শতাংশের আশপাশে হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন দূতাবাসের একটি সূত্র।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম কারণ ভিয়েতনাম উদাহরণ। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি যেখানে ১২৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তারা ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কে সমঝোতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ঘাটতি মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগামী এক-দেড় বছরে দেড় বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও দেশটি বলছে এক বছরের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসরকারি খাত থেকেও তুলা, সয়াবিন, গম ও ডাল আমদানির লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
তবে এই শুল্ক আরোপ ইস্যুটা বর্তমানে যতটা না বাণিজ্যিক তার চেয়ে বেশি অবাণিজ্যিক ও আন্তঃঅঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কিছু অবাণিজ্যিক ও বাণিজ্যিক নন ডিসক্লোজার চুক্তি চায়।