রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পূর্বাচল শহর প্রকল্পের নকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র তিনটি প্লট। এ তিনটি নকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে অনুমোদন ছাড়াই এই তিনটি প্লটের জায়গায় ২৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া এসব প্লটের টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জায়গা বরাদ্দ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা তিনটি প্লটের জায়গায় আরও তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে নার্সারি, নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজের জন্য বরাদ্দ করা প্লটগুলো থেকে কাটছাঁট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাখা হবে। নকশা পুনর্মূল্যায়নের জন্য কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। পরে হাই কোর্ট অনুমোদন দিলে সেটা গেজেট হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নয়, উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। প্রকল্পে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৬টি, সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২১টি। এর মধ্যে ১টি বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮টি, সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩টি। কলেজের জন্য বরাদ্দ প্লট ১৫টি, সেখানে দেওয়া হয়েছে ১৭টি।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য ক্যাটাগরিতে প্লটের বরাদ্দেও গরমিল দেখা গেছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৭টি, সেখানে রাজউক থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০টি। এর মধ্যে ১টি বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) শেখ মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ইতোপূর্বে বরাদ্দে অনিয়ম আছে কি না, সেটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব। তবে চতুর্থ সংশোধনী হাই কোর্ট চূড়ান্ত না করায় প্লটগুলো চূড়ান্ত করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, এখন মন্ত্রণালয় নকশা পুনর্মূল্যায়নের জন্য কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি নকশার কাজ করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। এরপর মন্ত্রণালয় হাই কোর্টে পাঠাবে। হাই কোর্ট রায় দিলেই চতুর্থ সংশোধনীর কাজ হবে। তখন বরাদ্দ হওয়া প্লটগুলো ঠিক করা হবে। না হয় বরাদ্দ হওয়া প্লটগুলো চূড়ান্ত হবে না। প্রসঙ্গত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনী মূলত মূল নকশার কিছু পরিবর্তন, যা আদালতের নির্দেশ এবং প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সংগতি রেখে করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বনভূমি, লেক, খাল, পার্ক, খেলার মাঠ, সবুজ বেষ্টনী ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য নকশার পরিবর্তন এবং নতুন প্লট তৈরির জন্য কিছু সংশোধনী। তবে প্রকল্পের শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে নকশার পরিবর্তন, ভূমি উন্নয়ন এবং অন্যান্য কারণে এই প্রকল্পে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছে, যার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে। চতুর্থ সংশোধনীতে মূলত যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-আদালতের নির্দেশ অনুসারে, বনভূমি, লেক, খাল, পার্ক, খেলার মাঠ ও সবুজ বেষ্টনী সংরক্ষণের জন্য নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন প্লট সৃষ্টির জন্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িল-পূর্বাচল ৩০০ ফুট সংযোগ সড়কের দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন করা হয়েছে, যা প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করবে। উল্লেখ্য আবাসন সংকট নিরসনে ১৯৯৫ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পূর্বাচল শহর প্রকল্প হাতে নেয়। ৬ হাজার ৩১৩ একর জমিতে প্রকল্পটির আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিকসহ ২৯ হাজার ৭৭৬টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক প্লট সংখ্যা ২৬ হাজার ২১৩টি। এ ছাড়াও অন্যান্য প্লটের মধ্যে বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রশাসনিক প্লটও রয়েছে ৩ হাজার ৫৬৩টি।