নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ সড়কে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে ওমানপ্রবাসী বাহারের স্ত্রী কবিতা ও মেয়েসহ একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নোয়াখালী টু লক্ষ্মীপুর সড়কের পূর্ব চন্দগঞ্জের গজদীশপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ওমানপ্রবাসী বাহার উদ্দিনের স্ত্রী বেগম কবিতা (৩০), মা মোরশিদা (৫৫), ভাবি লাবণী (৩০), ভাতিজি রেশমী (৮) ও লামিয়া (৯), নানি ফয়জুন্নেসা (৮০), মেয়ে মিম (২)। তারা লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরপল্লী গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিদেশফেরত এক প্রবাসী পরিবারকে বহনকারী মাইক্রোবাস ভোর ৫টা সাড়ে ৫টার দিকে পূর্ব চন্দগঞ্জের গজদীশপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। এতে সাতজনের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন ভূঁইয়া আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাসচালক পলাতক রয়েছেন। দুর্ঘটনার শিকার মাইক্রোবাস জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। চালকের চোখে ঘুম থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার উদ্দিন। তাকে আনতে পরিবারের ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হন। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা শোকে কাতর। বাড়িতে শত শত লোকের ভিড়। স্বজনদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। প্রতিবেশীরাও অশ্রুসিক্ত নয়নে শোক প্রকাশ করছিলেন। বেঁচে ফেরা প্রবাসী বাহার উদ্দিন ও আবদুুর রহিম জানান, ঘুম চোখে নিয়ে মাইক্রোবাস চালাচ্ছিলেন চালক রাসেল। বারবার বলা সত্ত্বেও গাড়ি থামিয়ে সামান্যও বিশ্রাম নেননি তিনি। এর আগে কুমিল্লায় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে আসেন। কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার আগেই ঘুমন্ত চালক গাড়িটি সড়কের পাশে খালে ফেলে দেন। গাড়িটি নৌকার মতো ভাসছিল আর ধীরে ধীরে ডুবছিল। তখন চালককে গাড়ির লক খুলতে বললেও খুলে দেননি। তবে চালক নিজে গাড়ির কাচ নামিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যান। কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি।
লক না খোলায় ভিতর থেকে টেনে আর কাউকে বের করা যায়নি। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে প্রবাসী বাহার, তার বাবা আবদুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা, ভাবি সুইটি ও শ্যালক রিয়াজ বের হয়ে আসেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাহারের বড় ভাই সৌদিতে থাকেন, তার ইচ্ছা শেষ দেখা দেখবেন মেয়ে ও স্ত্রীকে। তাই তার মেয়ে লামিয়া এবং স্ত্রী লাবণীকে হিমাগারে রাখা হয়। অন্যদের গতকাল বিকালেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে এদিন দুপুরে নিহতদের লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে ছুটে যান বিআরটিএ লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। এ সময় তিনি নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে নিহত প্রতিজনের পরিবারকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।