রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ হত্যার মতোই এবার নৃশংস ঘটনা ঘটল গাজীপুরে। চাঁদাবাজির সংবাদ প্রকাশের জেরে আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) নামের এক সাংবাদিককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাত ৮টার দিকে মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন ওই সাংবাদিক। সেখানে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা করে তুহিনকে হত্যা করে। এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হামলাকারী ও ঘাতকদের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। হত্যার পর দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের প্রত্যেকের হাতে রক্তমাখা রাম দা ও চাপাতি দেখা গেছে। জানা গেছে, সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির ডিলার ছিলেন। নিহত তুহিনের পাঁচ ও দুই বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে। এদিকে গাজীপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে আরেক সংবাদকর্মীর পা পাথর দিয়ে থেঁতলে দেয় সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগীর বুক ও পেটের ওপর উঠে করা হয় উল্লাস। এ দুই ঘটনার আলাদা দুটি ভিডিও ও স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। এ সময় অনেকেই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন। নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তুহিন পরিবার নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাস করতেন। স্থানীয়রা জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িতরা এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। নিহত সাংবাদিক তুহিন চাঁদাবাজি নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রচার করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল সন্ত্রাসীরা। তারা একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফুটপাতের অবৈধ দোকানপাটে চাঁদাবাজি নিয়ে গতকাল বিকালে ফেসবুকে র্ভিডিও পোস্ট করেন তুহিন। এরপর রাত ৮টার দিকে নিজ ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখেন ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য। এরপর তিনি মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ কয়েক সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। গাজীপুর বাসন থানার ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। কারা বা কী কারণে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। খুনিদের ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
এদিকে গাজীপুর সদর থানার কাছে প্রকাশ্যে আনোয়ার হোসেন সৌরভ নামে এক সংবাদকর্মীকে পাথর দিয়ে পা থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। সন্ত্রাসীদের কাছে বারবার আকুতি করেও তিনি রেহাই পাননি। এ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকাল ৫টার দিকে দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আনোয়ারের ওপর এ নির্মম নির্যাতন চালানো হয় প্রকাশ্যে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় সৌরভকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করছে, কেউ লাথি মারছে। কিছু দূর টেনে নেওয়ার পর একজন সন্ত্রাসী আনোয়ারের দিকে উত্তেজিত হয়ে ইট-পাথর নিয়ে যাচ্ছে আঘাত করার জন্য। একপর্যায়ে সে ইট-পাথর দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে পা ও শরীর থেঁতলে দেয়। এ সময় তার বুকের ওপর উঠে লাফাতে থাকে।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পুলিশ সদস্যের উপস্থিততে আনোয়ারের ওপর চলে নির্মম এ নির্যাতন। ইট দিয়ে পা থেঁতলে দেওয়ার পর একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে যান। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। আনোয়ারকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। হাসপাতাল সূত্র জানায়, আনোয়ারের পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের মা আনোয়ারা বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সদর থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি চাঁদাবাজি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় শহরের সাহাপাড়া এলাকায় তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।