আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে সংশোধন এনেছে সরকার। এ সংশোধনের ফলে মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকার যোগ্যতা হারাবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক পদে নির্বাচিত হওয়া বা বহাল থাকারও অযোগ্য হবেন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। এ সময় ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন। প্রেস সচিব জানান, গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বেসরকারি অংশগ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন/বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, ২০২৫’, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতিমালা, ২০২৫’ এবং আইন ও বিচার বিভাগের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (তৃতীয় সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে নতুন নীতিমালার কারণে উৎপাদনকারীরা বিপিডিবির বাইরে পছন্দের ক্রেতার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। এতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে বিপুল বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নীতিমালায় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান কতটুকু বিদ্যুৎ কিনতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপি ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে আর্থিক দায় আছে এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অযোগ্য হবেন। শফিকুল আলম বলেন, সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করছে। বাকি ১০টা কমিশনের আশু করণীয় ৩৬৭টি পরামর্শ নিয়ে কাজ হচ্ছে। তার মধ্যে ৫০টি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। ৩৭টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। ২৮০টি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আছে। এদিকে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতিমালা, ২০২৫’ এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবসা সম্প্রসারণ করে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট ডেটাকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা যাবে। মধ্যস্বত্বভোগী বিদায় করা হবে। বর্তমানে টেলিকম খাতে ২৬ ধরনের লাইসেন্স আছে, যা দিয়ে ২ হাজার ৯৯৯টি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ সেক্টরে অতিমাত্রায় মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে ইন্টারনেট ডেটা ও ভয়েস কল সেবার মূল্যও বেড়েছে। পদে পদে মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে বিটিআরসির পক্ষে খাতটিকে শৃঙ্খলায় আনা, মনিটরিং করা ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন নীতিমালায় মধ্যস্বত্বভোগী কমাতে মাত্র চারটা লাইসেন্সিং স্তর রাখা হয়েছে। পুরোনো নীতিমালায় অনেক নতুন প্রযুক্তি আনা যাচ্ছিল না। অনেক সেলুলার মোবাইল অপারেটর কোম্পানি আসতে পারেনি। এখন আসতে পারবে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এ ছাড়া প্রাইভেট ফাইভ জি, ভয়েস ওভার ওয়াইফাই, ওয়াইফাই সিক্স, ওয়াইফাই সেভেনের মতো প্রযুক্তিগুলো আসবে। এ ছাড়া মোবাইল ডেটার গতি মনিটরের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে নীতিমালায়। ফলে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে।