ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে নির্বাচনি সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপসূচি নির্ধারণের অন্তত দিন দশেক আগে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি (আমন্ত্রণ, কতজন প্রতিনিধি আসবে, লিখিত মতামত) পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটি, পূজা ও অন্যান্য ছুটি বিবেচনায় রেখে অক্টোবরজুড়ে সংলাপ চলতে পারে। ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এ সংলাপ এক থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে কয়েকটি ধাপে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের এ সংলাপে ডাকা হবে।
নিবন্ধনে আগ্রহীদের মধ্যে বাছাইয়ে টিকে থাকা নতুন ২২টি দলের মধ্যে ‘যোগ্যদের’ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেপ্টেম্বরেই অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের কথা রয়েছে। দল নিবন্ধনের কাজ শেষ করেই সংলাপ শুরু করতে চায় ইসি।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সংলাপে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে, তাদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। ৩০ সেপ্টেম্বর বা এর দিন দুয়েক পর সংলাপ শুরু হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, রোডম্যাপে যে সময় রয়েছে, সে অনুযায়ী এ মাসের শেষ দিকে সংলাপ শুরু করব। ইসি সচিবালয় এটা জানিয়ে দেবে। দুয়েক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে, তবে রোডম্যাপ অনুসরণ করেই এগোব। রোডম্যাপে বলা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সভা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। ২৩-৩০ সেপ্টেম্বর নতুন দল নিবন্ধন করে গেজেট প্রকাশ এবং সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংলাপ। নিবন্ধনে আগ্রহী ২২টি নতুন রাজনৈতিক দলের বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে কমিশন। নিবন্ধনযোগ্য দলের বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দলের নাম বা কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা শুনানি করে নিষ্পত্তি করবে ইসি। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা শেষ করার কথা রয়েছে।
নিবন্ধন কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আরও চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে। (সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন) যাচাই-বাছাই করছি; তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করছি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অফিশিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। (কারা নিবন্ধন পাচ্ছে সে সিদ্ধান্ত) শিগগির হবে, আরও যাচাই হচ্ছে।
কোন কোন দল নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে তা নিয়ে আভাস দিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। কমিশন সভায় আলোচনা হলে প্রয়োজনে পুনঃতদন্তের সিদ্ধান্তও হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্তমানে কানাডা সফরে রয়েছেন। মধ্য সেপ্টেম্বরে তার ফেরার কথা রয়েছে।
দলগুলোর মতামত না নিয়েই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও নিজস্ব প্রস্তাব মিলিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সব মহলে অস্বস্তি রয়েছে। নির্বাচনি আইন সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন, পুলিশের রদবদল, ইসির ভূমিকা, কর্তৃত্ব নিয়ে বরাবরই সংলাপে সরব থাকে দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়েও দলগুলোর মতামত চাইবে ইসি।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫০টি। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোও এবারের সংলাপে যুক্ত হবে। সে কারণে নিবন্ধন কাজ শেষ করেই আমন্ত্রণসূচি চূড়ান্ত করা হবে।