ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মুনির সাতোরি বলেছেন, অবশ্যই আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হতে হবে। নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।
বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সফরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ইসাবেল উইসেলার-লিমা, আরকাদিউস মুলারচিক, উরমাস পায়েত এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা।
সাতোরি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন কেবল একটি ধাপ মাত্র। সব রাজনৈতিক অংশীদাররা যেন ঐকমত্য তৈরি হওয়া সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) মানবাধিকার অঙ্গীকারের মান নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তবে মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই হবে সহযোগিতা গভীর করার প্রধান মাপকাঠি। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসন, মানবাধিকার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম মান বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং এসব বিষয়ে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করা। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এ প্রতিনিধি জানান, প্রতি বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটি বিভিন্ন দেশে একাধিক সফর করেন এবং কোন দেশ সফর করবেন, তা নিজেরাই নির্বাচন করেন। আমরা বাংলাদেশকে এ সময়ে বেছে নিয়েছি দুটি কারণে- দেশটি একটি পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিবর্তন প্রায় শেষের দিকে। এটি বাংলাদেশ ও এর গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, অতীতের দিকে ফিরে তাকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে সম্মান করা হয়নি, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, নাগরিক সমাজ বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও ছিল না। অথচ এসব বিষয় একটি সুস্থ গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার অপরিহার্য নিশ্চয়তা। নির্বাচনের পর নতুনভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে। তবে নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে, স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য।
তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। ইইউ যখনই কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে বা সম্পর্ক গভীর করে, তখন মানবাধিকার উপকমিটি সে দেশে ভ্রমণ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ার ফলাফল যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমর্থন পায়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন সর্বোত্তমভাবে সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে। তবে পরিবর্তন এখনো শেষ হয়নি। এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাকি আছে, তা হলো নির্বাচন। নির্বাচিত সংসদ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন ও বাস্তবায়ন করবে কি না, সেটিই আসল প্রশ্ন।