মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) কারও নাম এলেই তিনি জাতীয় সংসদসহ সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন। একই সঙ্গে যোগ্যতা হারাবেন প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে থাকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের নতুন সংশোধনে এ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সোমবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বলে গতকাল জানানো হয়েছে।
এ সংশোধনীর ফলে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলমান থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হলো। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, শিগগিরই আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট আরও কয়েকজন নেতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হতে পারে। তখন তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য হবেন।
গতকাল এক ব্রিফিংয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ আরেকটি সংশোধন আনা হয়েছে। এই সংশোধনীর মূল বিষয় হলো-কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল হয়, তাহলে তিনি বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না। অর্থাৎ তিনি জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না। একইভাবে সেই ব্যক্তি কোনো সরকারি চাকরি করতে পারবেন না।
গত বছর ৫ আগস্টের পর ক্ষমতায় এসে অন্তর্বর্তী সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করেছে। তৃতীয় সংশোধনীর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশ ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে। সংশোধিত অধ্যাদেশে একটি নতুন ধারা (২০ সি) যুক্ত করা হয়েছে।
ধারাটিতে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চারটি ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকা; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া; প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া এবং কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে তিনি যোগ্যতা হারাবেন। এতে বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনালে কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত হলে, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।