অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। গতকাল মগবাজারে আল ফালাহ্ মিলনায়তনে আট দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, নির্বাচনে সব দলের সমান অধিকার, সমতা রক্ষার যে দাবি সেটা বর্তমান সময়ে ভঙ্গ হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি দলকে খুশি করার জন্য কোনো গোপন পরামর্শে হয়তো এ কাজটা চলছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টাকে নিরপেক্ষ থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। এর আগে আট দলের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীম (পীরসাহেব, চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক চান এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হাক্কানী। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আট দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে জাতির প্রত্যাশা ছিল উচ্চ। কিন্তু আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের যে দাবি জানিয়েছিলাম, তা উপেক্ষিত হয়েছে। একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি দলের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার তাদের দিকে ঝুুঁকেছে-এমন ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে। ফলে সংকটের সমাধান না হয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার প্রশাসনে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠ সমতল করতে ডিসি-এসপিসহ সব পর্যায়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে একটি বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যশীল লোক নিয়োগ করা হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনজন উপদেষ্টা সরকারের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তিকর বা মিসগাইডিং ভূমিকা নিচ্ছেন বলে আমরা উদ্বিগ্ন। এই ইস্যু ফরমালি এবং ইনফরমালি উত্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা প্রমাণসহ তাদের নাম প্রকাশ করব। আমাদের হাতে তথ্যপ্রমাণ আছে যা ভবিষ্যতে জনগণের সামনে আনা হবে। কিন্তু আমরা মনে করি সরকার এ বিষয়ে সজাগ থাকবে। তিনি বলেন, জুলাই সনদে যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো প্রধান উপদেষ্টাকে দ্রুত স্পষ্ট করার আহ্বান জানাচ্ছি। নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের যৌক্তিক কারণ আট দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারপরও প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের কথা বলেছেন। এ কারণে জনমনে সংশয় ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ সংশয় সরকারকেই দূর করতে হবে।
তিনি জানান, দেশের মানুষ ‘হ্যাঁ’ ভোট ও সংস্কারের পক্ষে, আর যারা ‘না’ ভোটের প্রচারণা করছে তারা সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।