ঈদে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব বেশি থাকে। আর কোরবানির ঈদে বেশি মাংস খাওয়ার ফলে পেট ফাঁপে, জ্বালাপোড়া করে, ব্যথা করে। আর অনেকেরই এ সময় দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। তাই এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেকেই বছরজুড়ে এ সমস্যায় ভোগেন। তবে সামনে আসছে কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদের সময় খাদ্য তালিকায় প্রচুর তেল, চর্বি, মসলার সমন্বয়ে তৈরি খাবার থাকে বেশি। আর অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান না করায় অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায় বহুগুণ। তাই এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সবাইকে জানাতে চাই।
কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation কি?
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা। যখন একজন লোক সহজে মলত্যাগ করতে সক্ষম হন না।
ডাক্তারি ভাষায় যদি প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও, তখনই একে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। কোষ্ঠকাঠিন্য যে কোনো বয়সেই হতে পারে, তবে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
কোষ্ঠকাঠিন্য শনাক্ত করা কোনো কঠিন বিষয় নয়, যে লক্ষণগুলো সাধারণত দৃষ্টিগোচর হয় সেগুলো হলোÑ
► মল শুষ্ক, শক্ত/কঠিন হওয়া;
► মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা;
► মলত্যাগে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
► অধিক সময় ধরে মলত্যাগের পরও অসম্পূর্ণ ভাব হওয়া;
► মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভব হওয়া;
► আঙ্গুলের সাহায্যে বা অন্য কোনো উপায়ে পায়খানা বের করার চেষ্টা করা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ
► আঁশজাতীয় খাবার, শাক-সবজি ও ফলমূল কম খাওয়া;
► পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা;
► শারীরিক পরিশ্রম (হাঁটাচলা কিংবা ব্যায়াম না করা);
► চর্বি জাতীয় ও আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া;
► অতিরিক্ত চা/কফি পান করা;
► অন্ত্রনালির ক্যান্সার;
► ডায়াবেটিস/হাইপোসাইরয়ডিজম;
► মস্তিষ্কে টিউমার ও রক্তক্ষরণ;
► বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা;
► দুশ্চিন্তায় ভোগা বা মানসিক চাপ;
► বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, আয়রন, ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি)।
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিক্রিয়া/জটিলতা
কোষ্ঠকাঠিন্যের থেকে শরীরে অনেক রকম রোগ হতে পারে। যেমন-
► এনাল ফিশার বা গেজ রোগ;
► পাইলস বা অর্শ;
► পায়খানা/মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
► অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে মলদ্বার বের হয়ে আসতে পারে, যাকে বলে রেকটাল প্রোল্যাপস;
► খাদ্যনালি বাধাগ্রস্ত হয়ে প্যাঁচ লেগে যেতে পারে;
► খাদ্যনালিতে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে;
► অরুচি, বমিভাব, অল্পতে পেট ভরে যাওয়া এবং অনেক দিন ঠিকমতো না খেতে পারার কারণে ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা হওয়া ইত্যাদি।
► মানসিক অবসাদ, অনিদ্রা, ক্লান্তি ইত্যাদি হতে পারে।
প্রতিকার
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, তাই প্রতিকারের জন্য এর কারণ অপসারণের ওপর জোর দিতে হবে।
► খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্যের প্রতি জোর দিতে হবে। প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল ও আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে;
► পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি (দৈনিক ৮-১০ গ্লাস) পান করতে হবে;
► ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, লাল মাংস (গরুর মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি) যথাসম্ভব কম খেতে হবে;
► নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করা গুরুত্বপূর্ণ;
► নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস করতে হবে এবং অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
► দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হবে।
► প্রয়োজনে ইসবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলতে উপকার পাওয়া যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাকে অনেকেই স্বাভাবিক ধরে নেন যা সঠিক নয়। এটি জটিল রোগ না হলেও, অনেক ক্ষেত্রে তা কোনো রোগের পূর্বাভাসও হতে পারে। যেমন- অন্ত্রনালির ক্যান্সার। তাই অবহেলা না করে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একটু সচেতনতা এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলেই সুস্থ থাকা সম্ভব।
লেখক-
ডা. আফরিন সুলতানা
সার্জারি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।