শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন ‘সি’। এ ছাড়া ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনের সুরক্ষা দিতে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি উপকারী। এর অভাবে অবসন্নতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
সমস্যা ও সমাধান
ভিটামিন সির অভাবে অসুখ হলেও বর্তমানে এর সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ হলো, এই ভিটামিন সির অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপাত হতে পারে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যাটি সবারই জানা। গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্ট বা শরীরের কোনো গাঁট থেকে রক্তপাত হতে পারে। এমনকি হেয়ার ফলিকলসের গোড়ায় ব্লিডিং হতে পারে। সেখানকার ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালসিটে পড়ে। ভিটামিন সি চোট আঘাত সারানোর জন্য খুব প্রয়োজনীয়। তাই এই ভিটামিনের অভাব হলে চোট-আঘাত একবার লাগলে তা সারতে সময় লাগে বেশি। অ্যানিমিয়াও হতে পারে এর অভাবে। মানব দেহে অ্যানিমিয়ার অন্যতম কারণ আয়রনের অভাব। শরীরে আয়রন অ্যাবজর্বশনের জন্য ভিটামিন সির প্রয়োজন। কোলাজেন শরীরে প্রোটিন তৈরি করে। প্রোটিন শক্তকরত ভিটামিন সি দরকার। এটা না হলে চোট-আঘাতও সারতে সময় লাগে। ফলে, কেউ যদি অ্যানিমিয়ার সমস্যা নিয়ে আসেন, তাহলে তাকে আয়রনের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। অর্থাৎ ভিটামিন সির অভাবে মূলত তিনটি সমস্যা হতে পারে; ব্লিডিং, অ্যানিমিয়া ও চোট শুকোতে দেরি হওয়া। ভিটামিন সির অভাবের প্রধান লক্ষণ হলো মাড়ি ফুলে গিয়ে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া। এ ছাড়া ত্বকে কোনো কারণ ছাড়াই কালসিটেও পড়তে পারে। শিশুদের ও বয়োবৃদ্ধদের ভিটামিন সির অভাব বেশি হয়।
বয়স্ক মানুষ, বিশেষত যারা দাঁত না থাকার ফলে অনেক কিছু খেতে পারেন না, তাদের অনেকের ভিটামিন সির অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয়। কোনো গুরুতর সার্জারির পরে খাওয়া-দাওয়া করতে অসুবিধে হলেও এরকম হতে পারে। উপসর্গ নিয়ে কেউ ডাক্তারের কাছে আসেন ও তাকে দেখে ব্লাড টেস্ট করতে দেওয়া হয়। রক্তের লিউকোসাইট কোষের পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় শরীরে কতটা ভিটামিন সি সঞ্চিত আছে। সবক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করা হয় না অবশ্য। চিকিৎসা হিসেবে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। অপারেশনের পরে রোগীকে মাল্টিভিটামিন দেওয়া হয়। এতে ভিটামিন সি-ও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। বা ভিটামিন সি ট্যাবলেট নির্দিষ্ট ডোজে সাত-আট দিন নিলেও কাজে দেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডায়েট।
ভিটামিন সির উৎস
প্রায় সব ধরনের ফলমূলে ভিটামিন সি রয়েছে। তবে সাধারণত টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সির উৎস। যেমন- লেবু, মাল্টা, কমলা, জলপাই, আমলকী, আনারস ইত্যাদি। তবে এর মধ্যে পাতিলেবু, কমলালেবু, আমলকী, টমেটো ইত্যাদি খুব ভালো। এ ছাড়া পাতলা সবজিও এবং কাঁচামরিচেও ভিটামিন সি’ পাওয়া যায়।
জেনে রাখুন
ভিটামিন সির অভাব কিন্তু একদিনে হয় না। শরীরে এমনিতেই ভিটামিন সি সঞ্চিত থাকে। আর এটি যেহেতু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, তাই একটু খেলেই দীর্ঘদিন এর অভাব হয় না। আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন। ভিটামিন সি খেলে সর্দি-কাশি হয় না, এ রকম ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বেশি ডোজে ভিটামিন সি খেলেই সর্দি হবে না, এ রকম নয়।