ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। আর মাত্র কয়েকদিন দিন পরেই ঈদ। ঈদে সবার ঘরে থাকা চাই সাধ্যমতো স্পেশাল সব খাবার। কোরবানির ঈদ মানেই গরু, খাসি, উট, দুম্বা কিংবা লাল মাংসের গুরুপাক করা সব খাবারের সঙ্গে সেমাই, সুজি, পায়েশসহ নানান মিষ্টান্ন। যারা ওজন নিয়ে চিন্তিত বা নানা অসুখে ভুগছেন তারা এসময় খুবই দোটানায় পড়ে যান।
প্রতিবারের ঈদের চেয়ে এবারের ঈদ একেবারেই আলাদা। নিজের ও পরিবারের সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য সংযমের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের অনেক কিছু মাথায় রেখে কোরবানি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। এ সময় ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক না থাকলে, চারদিকে করোনা বিস্তার দ্রুতগতিতে বেড়ে যাবে। সেজন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং পাশাপাশি খাদ্য তালিকা কেমন খাবার থাকবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান ও সাবধানতা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা :
* যে জায়গায় কোরবানি দেওয়া হবে সে জায়গায় কোরবানির আগে ও পরে জীবাণুনাশক ছড়িয়ে নিতে হবে।
* কোরবানির কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অবশ্যই মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও পায়ে রাবারের জুতা পরে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে এবং উপস্থিত সবাই নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলবেন।
* মাংস কাটার ও রাখার যন্ত্রপাতি ও পাত্র ব্যবহারের আগে ও পড়ে যথাসম্ভব গরম পানি ও জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
* বাসায় মাংস আনার পর নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি মাংস বণ্টন ও রান্নার কাজে যুক্ত হবেন এবং কাজ শেষে নিজেদের শরীর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
*বাসায় আনার পর দ্রুত মাংস সংরক্ষণ করতে হবে এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
* কোরবানির বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট জায়গা ফেলতে হবে এবং সেক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
খাদ্যবিষয়ক সচেতনতা :
* দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে।
* কম তেলে রান্না করতে হবে।
* রান্নার আগে সম্ভব হলে মাংস ৫-১০ মিনিট সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যায়।
* মাংস রান্নার সময় উচ্চতাপে রান্না করতে হবে।
* মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টকদই, পেঁপে বাটা ও লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
* যাদের উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে বা কো-মরবিডিটি আছে তারা একেবারেই না এড়াতে পারলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে দু-এক টুকরো খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাংস রান্নায় সবজি ব্যবহার করতে হবে যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম, কিংবা তারা মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন।
* একবারে ভুঁড়ি ভোজ না করে অল্প অল্প করে বারেবারে খাওয়া উচিত।
* আমরা কোরবানির সময় একবারে বেশি মাংস রান্না করে সেটা বারবার জ্বালিয়ে ঝুরি করে খেতে অনেকেই পছন্দ করি, কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সুস্থ থাকতে হলে এটি এড়িয়ে চলতে হবে।
* প্রত্যেক বেলায় মাংসের তিন/চার পদ না রেখে একবার একবার একটি একটি করে পদ নির্বাচন করুন।
* গুরুপাক খাবারের সঙ্গে শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখা যেতে পারে।
* তিনবেলা ভারি খাবার না খেয়ে যে কোনো একবেলা হালকা খাবার যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।
* প্রত্যেক প্রধান খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন যা বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়াতে সাহায্য করে।
* খাবার কিছু সময় পর তালিকায় লেবুপানি বা টকদই রাখলেও তা হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
* ঈদে আমরা অনেকে নানা সোডাপানি বা সফট ড্রিংকস পান করি এগুলোর পরিবর্তে চিনি ছাড়া নানা মৌসুমি ফলের জুস গ্রহণ উত্তম।
* প্রতিবার মাংস খাওয়ার পর পেটে গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।
* প্রত্যেকদিন অবশ্যই মধ্য সকাল বা বিকালের নাশতায় টকজাতীয় মৌসুমি ফল রাখতে হবে যা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
* দিনে দু-একবার আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচি ইত্যাদি মসলা চা যেমন ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করবে তেমনি শরীরের বিপাক হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
* পানীয় হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার ঈদের এই সময় খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
* মাংস খাওয়ার সময় ঝোল বাদে খাওয়া ভালো। আবারও ভুনা মাংসের পরিবর্তে কম তেলে গ্রিল, বারবিকিউ করে বা কাবাব করেও মাংস খাওয়া যায়।
* ঈদে বাড়িতে নানা রকম খাবার থাকে তাই বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন।
* ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয় সেজন্য অবশ্যই সকাল বিকালে ব্যায়াম করে বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির