২১ জুলাই, ২০২১ ১৩:৪৬

গরুর মাংস যাদের জন্য স্বাস্থ্যকর

ডা. সজল আশফাক

গরুর মাংস যাদের জন্য স্বাস্থ্যকর

রেডমিট বা লাল মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শুনতে শুনতে অনেকেরই মনে হতে পারে লাল মাংস তথা গরু-খাসির মাংসের বুঝি কোনো ভালো গুণই নেই। আসলে রেডমিট সম্পর্কে সতর্কবাণীর প্রায় পুরোটাই বয়স্কদের জন্য। যাদের বয়স ৩০-এর নিচে,  রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক আছে, মেদাধিক্য নেই, ওজনও স্বাভাবিক তাদের জন্য লাল মাংসের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক হবে না। 

রেডমিট বা লাল মাংস অনেকেই পছন্দ করেন, কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে কেউ কেউ গরুর মাংসকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। এর কারণ হল রেডমিটের পক্ষ এবং বিপক্ষ-দুই দলই চরম পক্ষপাতিত্বের বিবেচনায় রেডমিটকে বিচার করছেন। আসলে কৃশকায় গরুর মাংসকে স্বাস্থ্যকরই বলা চলে। কারণ তাতে কোলেস্টেরল থাকে কম। এ ধরনের গরুর সাধারণ মাংস দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম গ্রহণে খুব একটা অসুবিধা নেই। 

তবে কথা হচ্ছে, হৃদরোগ কিংবা ক্যানসার ঝুঁকি থাকলে রেডমিট এড়িয়ে চলা উচিত। আবার এ কথাও ধ্রুব সত্য যে, গরুর মাংস বা রেডমিট হচ্ছে 
প্রাণিজ প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি১২-এর অন্যতম উৎস। এই গরুর মাংসই হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার যদি গরুর মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়া যায়। পাশাপাশি এই কথাও সত্য মাত্রাতরিক্ত রেডমিট আবার হৃদরোগ এবং কোনো কোনো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু কৃশকায় গরুর মাংস কিংবা চর্বি বাদ দেওয়া গরুর মাংসে এই সম্পৃক্ত চর্বি খুবই কম পরিমাণে থাকার জন্য সেই ঝুঁকি কিছুটা কম।

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃশকায় মানে কম চর্বিসম্পন্ন গরুর মাংসের কিছু উপাদান যেমন- অ্যামাইনো অ্যাসিড, টরাইন এবং আর্জিনাইন উল্টো সিসটোলিক (উপরের) রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বরং কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংসের চেয়ে অতিরিক্ত ভাত খাওয়া বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকের ধারণা গরুর মাংসে বুঝি শুধু ক্ষতিকর সম্পৃক্ত চর্বিই থাকে। আসলে তা নয়। কৃশকায় গরুর মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (সম্পৃক্ত চর্বি), মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের সমানুপাতিক হার হল যথাক্রমে ২৪:৪০:১৪ ।

তবে রেডমিটের এসব ঝুঁকির পেছনে মূলত দায়ী মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ। রেডমিট এককভাবে দায়ী নয়। দেখা গেছে দৈনিক ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ৪২ শতাংশ আর ১৯ শতাংশ বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। তবে গরুর মাংসের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কিছুটা কম। রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি শূকরের মাংসে। প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড মিটের মধ্যে সসেজ, সালামি, বেকন এবং লাঞ্চন মিটস অনেকেরই পছন্দের খাবার। অবাক বিষয় হচ্ছে, প্রক্রিয়াজাত এবং সাধারণ গরুর মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ প্রায় একই। প্রক্রিয়াজাত গরুর মাংসে কোলেস্টেরল এবং আয়রন কম। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যবহৃত লবণের কারণে সোডিয়াম এবং সংরক্ষণে ব্যবহৃত উপাদানের কারণে নাইট্রেট বেশি থাকে। 
এই লবণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় এবং নাইট্রেটের জন্য রক্তনালির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইনসুলিন নিঃসরণ কমে গিয়ে ডায়াবেটিস প্রবণতা বাড়ায়। যার ফলাফল হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো নয়, তেমনি গরুর মাংসও বেশি খাওয়া ভালো নয়। তবে ঢালাওভাবে সবাই গরুর মাংস এড়িয়ে চলবেন এটা ঠিক নয়। আবারও বলছি, সাধারণ কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংস শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবার জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচিত। তবে আগেই বলেছি, বয়স ৩০-এর ওপরে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, মেদাধিক্য ও বাড়তি ওজনদার মানুষ, ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিংবা আক্রান্ত হয়েছেন হৃদরোগে তাদের জন্য গরুর মাংস তথা রেডমিট এড়িয়ে চলাই মঙ্গলজনক। কিন্তু কোরবানি উপলক্ষে দেয়া গরুর মাংস দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি এবং আয়রনসহ কিছু দরকারি ভিটামিনের চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সুতরাং সাধারণভাবে বলতে গেলে মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগের জন্যই গরুর মাংস উপকারি।

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর