৫ আগস্ট, ২০২১ ১৯:৩৫

‘করোনা নাকি ডেঙ্গু : প্রয়োজন জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা’

ডা. আরিফ মাহমুদ

‘করোনা নাকি ডেঙ্গু : প্রয়োজন জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা’

ডা. আরিফ মাহমুদ

দেশে করোনা মহামারীর উচ্চ সংক্রমণের (২৯%) সময় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই দুই ভাইরাস বাহিত রোগের জন্য আমাদের জীবনযাপন বিপর্যস্ত। এতে স্বাস্থ্য সেবার উপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। করোনা ও ডেঙ্গু রোগের লক্ষণে কিছু কিছু মিল থাকলেও, অমিল অনেক। করোনার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা হতে পারে, যেটা ডেঙ্গুতে দেখা যায় না। ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে চার-পাঁচদিন পরে শরীরে লাল র‍্যাশ হতে পারে। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে ডেঙ্গু ‘শক সিন্ড্রোম’ যাতে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

করোনার লক্ষণসমূহ পরিবর্তনশীল; করোনার ভ্যারিয়েন্টের উপর নির্ভর করে লক্ষণ পরিবর্তিত হয়। করোনার সাধারণ লক্ষণসমূহ : জ্বর, কাশি, অবসাদগ্রস্ত, গলা ব্যাথা, নাকে পানি, শ্বাসকষ্ট, নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া ও খাবারের স্বাদ না পাওয়া ।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ : 

১. প্রচণ্ড জ্বর।

২. তীব্র মাথা ব্যথা, বমি।

৩. শরীরে লাল র‍্যাশ উঠা।

৪. মাংসপেশীতে ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা ।

করোনার নতুন লক্ষণসমূহ :

১। ফোলা জিহ্বা, বুকে হালকা ব্যথা।
২। চোখ জ্বালাপোড়া, হাত ও পায়ের আঙুলের রঙ ফ্যাকাশে হওয়া।
৩। হাতের তালুতে জ্বালাপোড়া।
৪। মাথা ব্যাথা, গলা ব্যাথা।
৫। পায়ের তালুতে লালচে ভাব।
৬। ডায়রিয়া, মুখে ঘা ও চামড়ায় র‍্যাশ।

এই দুই রোগ হতে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে জড়িত সবাইকে কার্যকরী Public Health Measure নিতে হবে। সাথে সাথে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহ অন্যান্য বিধিনিষেধগুলো গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে ও সম্পৃক্ত হতে হবে।

করোনা প্রতিরোধে করণীয় :

১. সবসময় সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান করা।
২. শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
৩. প্রতি ঘণ্টায় সাবান পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া।
৪. প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে না যাওয়া, ভিড়ের স্থান এড়িয়ে চলা।
৫. হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু পেপার, রুমাল, হাতের কনুই ব্যবহার করা।
৬. নিয়মিত বাসা ও কাজের জায়গা পরিষ্কার রাখা।
৭. মাছ, মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া।
৮. করোনা টিকা গ্রহণ করা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় :

১. মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করা।
২. ঘর ও আশে পাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা যাতে এডিস মশার লাভা বিস্তার না করতে পারে।
৩. ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা; যাতে এডিস মশা বিস্তার না করতে পারে।
৪. রাতে বা দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা ।
৫. স্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্থাপন করা।
৬. মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করা।
৭. জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা ।

করোনার ভয়ংকর অবস্থার সাথে আমরা পরিচিত। একইসাথে ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রোগীদের হাসপাতালে একটি বিছানার জন্য যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বর যেকোন বয়সের ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে শিশু কিশোররা (৫১.৪২%) সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগের Out Break (প্রকোপ) প্রথম দেখা যায় ২০০০ সালে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আবার ও ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই বছর ১ লক্ষের বেশি রোগী শনাক্ত হয় ও মৃত্যু হয় ১৭৯ জন রোগীর। পুরুষ (৬৪.১%) ও নারী (৩৫.৮৯%) উভয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ঢাকাতেই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩১৮ জন। নতুন বছরে এখন পর্যন্ত ৯১৪ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।

সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সম্পৃক্তাতায় ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা কমিয়ে আনা সম্ভব। সুতরাং আমাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং রোগ-প্রতিরোধের ব্যবস্থাগুলো সবাইকে একযোগে মেনে চলতে হবে। 

সূত্র : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ল্যানচেট।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর (মেডিকেল সার্ভিসেস), এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর