কোলন ক্যান্সারকে অন্যান্য হাই প্রোফাইল ক্যান্সারের মতো এতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় না, কিন্তু এটা করা উচিত। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যাদের বয়স ৬০ বা তার ঊর্ধ্বে তারা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে; এছাড়াও পারিবারিক ইতিহাস অথবা যাদের ইনফ্লেমেটরি বাউল ডিজিজ (পেটের রোগ) আছে তাদেরও কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু সুখবর হচ্ছে বর্তমানে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। বিভিন্ন নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চললে প্রায় ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে আপনারা নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে পারেন-
নিয়মিত স্ক্রিনিং: কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো নিয়মিত স্ক্রিনিং করা। এটি প্রাথমিক অবস্থায়ই কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারে এবং এ সময়ই চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিরাময় সম্ভব।
প্রতিবছর স্টুল অকাল্ট ব্লাডটেস্ট : এই পরীক্ষার মাধ্যমে মলে লুকানো রক্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব এবং এটি ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। এই টেস্টটি সহজ এবং স্বল্প সময়ে সম্পন্ন হয়। আপনি শুধু অল্প মলের নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং এগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য।
প্রতি ১০ বছর অন্তর কোলনোস্কপি : এতে ছোট টিউবে সচল ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো কোলনের অভ্যন্তরে পরীক্ষা করা হয়। এ টেস্টটিতে আপনাকে হাসপাতালে অবস্থান করতে হবে। যদি পরীক্ষার পর পলিপ পাওয়া যায় অথবা অন্যান্য সন্দেহ হয়, তাহলে তা টেস্টের সময়ই অপসারণ করা সম্ভব।
প্রতি ৫ বছর অন্তর ফ্লেক্সিবল সিগময়ডোস্কপি : এটি কোলনোস্কপির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি টেস্ট, এটিতে কোলনের অভ্যন্তরে নিম্নঅংশে (সিগময়ড) ছোট সচল ক্যামেরাযুক্ত টিউবের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। এই টেস্টে হাসপাতালে অবস্থানের প্রয়োজন নেই।
প্রতি বছর ভার্চুয়াল কোলনোস্কপি : এটি এক ধরনের সিটি স্ক্যান যেটি কোলনের অভ্যন্তরের থ্রি ডি ছবি ধারণ করে। এই টেস্টে পায়ুপথে একটি ছোট টিউব প্রবেশ করানো হয়। এই টেস্ট করতে অল্প কিছু সময় লাগে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ : ধূমপান ব্যতীত অন্য যে জিনিসটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় তা হলো অতিরিক্ত ওজন। অধিক ওজন কমপক্ষে ১১টি বিভিন্ন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সামগ্রিকভাবে যদি আপনি অধিক ওজনের অধিকারী হন প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে আর ওজন না বাড়ানো, যেটি আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর হবে। বেশি পরিমাণ ওজন হ্রাসের জন্য প্রথমে অল্প করে ওজন হ্রাস করতে হবে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন : এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধূমপান না করা সুস্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম উপায়। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং এমফাইসেমার মতো ভয়াবহ অসুখ ও প্রায় ১৪ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান।
পরিমাণ মতো লাল মাংস : প্রচুর পরিমাণে রেড মিট যেমন বড় মাংসের টুকরাসহ হ্যাম বার্গার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া সসেজের মতো বাজার জাত কৃত রেডমিটও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক গুণ বৃদ্ধি করে।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ : পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিদিন অন্তত ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১০০০ আন্তর্জাতিক ইউনিট ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।