প্রস্টেট একটি সুপারির মতো মাংস পিণ্ড, যা পুরুষের মূত্রথলির গ্রিবার নিচে মূত্রনালিকে ঘিরে থাকে। এর প্রধান কাজ বীর্যের তরল অংশ তৈরি করে শুক্রাণুর খাদ্যের জোগান দেওয়া।
বৃদ্ধির কারণ : বয়স বৃদ্ধির (৫০ বছরের অধিক) সঙ্গে সঙ্গে দেহের হরমোনেও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। হরমোনের এ পরিবর্তনকেই প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির (বিনাইন এনলার্জমেন্ট অফ প্রস্টেট) কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বৃদ্ধির ফলাফল : প্রথমত : মূত্রনালির চারদিকে প্রস্টেটের কোষ সংখ্যা বেড়ে মূত্রনালিকে চেপে ধরে।
দ্বিতীয়ত : প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্যভাগ বৃদ্ধি পেয়ে মূত্রনালির বাইরের পথকে আটকে দেয়। ফলে মূত্রথলি থেকে সহজে প্রস্রাব বের হতে পারে না।
রোগের উপসর্গসমূহ : ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব করার পরও প্রস্রাবের থলি খালি না হওয়া, প্রস্রাবের বেগ আটকিয়ে রাখা অসম্ভব হওয়া, প্রস্রাবের গতি দুর্বল হওয়া ও মাঝপথে বন্ধ হওয়া, প্রস্রাবের থলি বেশি ভরে গিয়ে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
রোগ নির্ণয় : রোগের ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং রোগীর লক্ষণ পর্যালোচনা করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। শারীরিক পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো DRE (পায়ুপথে আঙ্গুল দিয়ে প্রস্টেট পরীক্ষা করে প্রস্টেট গ্রন্থির আকার, প্রকৃতি, ধরন এবং কাঠামো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা)।
প্রস্টেট এর স্ফীতি ছাড়া অন্যান্য যেসব রোগের কারণে উপরের উপসর্গ হতে পারে তা হলো- মূত্রথলির পাথর, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ, ডায়াবেটিস, স্নায়ু রোগ, প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার, স্ট্রোক, আঘাত/গনোরিয়াজনিত মূত্রনালির সরু (Stricture) হওয়া।
(Stricture) রোগের লক্ষণের মাত্রার ওপর বিভিন্ন পদ্ধতি এবং অনেক ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়-
১. জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন : মূলত জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন করে বা পানি ও তরল খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি রোধ করা যায়। এক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না।
২. ওষুধের ভূমিকা : সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি রোধে ব্যবহার করা হয়।
ক) আলফা ব্লকার জাতীয় ওষুধ, যা মূত্রাশয়ের গ্রিবাকে ঢিলা করে।খ) হরমোন চিকিৎসা, যা প্রস্টেট গ্রন্থিকে ছোট রাখতে সাহায্য করে।
৩. সার্জারি বা শল্য চিকিৎসা : প্রস্টেটের যে অংশ বড় হয়েছে তা এন্ডোস্কপিক যন্ত্রের মাধ্যমে কেটে প্রস্রাবের নালিকে প্রসারিত করে এর চিকিৎসা করা যায়। এ পদ্ধতিকে টিইউআরএফ বা ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব প্রস্টেট বলে। এ পদ্ধতিতে শরীরের বাইরের অংশে কোনোরকম কাটা হয় না বিধায় রোগী সাধারণত তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি যেতে পারেন।
লেজার চিকিৎসা : প্রস্টেট সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত এ পদ্ধতি অত্যন্ত নিরাপদ এবং এই পদ্ধতিতে সার্জারি করলে রক্তপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। লেজার প্রস্টেটেকটমির পর মাত্র ২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। পেসমেকার বসানো হার্টের রোগী এবং রক্ত তরল রাখার ওষুধ সেবনরত রোগীদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকিমুক্ত।
লেখক : কনসালটেন্ট, ইউরোলজি অ্যান্ড কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ডিপার্টমেন্ট, এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।