প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে সারা দেশে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জুলাই বিপ্লবীরা আজ পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। আজ বেলা ৩টায় রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত হবে ‘মার্চ ফর ড. ইউনূস’। জাতীয় সরকার ঘোষণা করে ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় রাখার দাবিতে এ কর্মসূচি দিয়েছে ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে একটি সংগঠন। সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সমাজমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও চলছে নানান আলোচনা। এ পরিস্থিতিতে দলগুলো তাদের করণীয় নির্ধারণে নিজেদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ঘন ঘন বৈঠক করছে। আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপি এবং রাত ৮টায় জামায়াতের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সবার এখন একই প্রশ্ন-আজকের পর কাল থেকে কী হতে যাচ্ছে দেশে?
জানা গেছে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন অধ্যাপক ড. ইউনূস। পরে দুই-তিন জন সিনিয়র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন জনের অনুরোধে পদত্যাগ না করলেও প্রধান উপদেষ্টা এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি চরম হতাশ বলে জানা গেছে। তবে শাহবাগের আজকের কর্মসূচি/সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে যদি কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়, তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, ড. ইউনূস শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ না করে বরং বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ইতোমধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় বিএনপির পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানায় বিএনপি। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো ছোট করার কথাও বলেছে দলটি।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করেনি। তবে ড. ইউনূস দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে রাষ্ট্র বিকল্প খুঁজে নেবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কেউই কখনো একেবারে অপরিহার্য নন। গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে অন্তর্বর্তী সরকারের যে কয়েকজন উপদেষ্টা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের অব্যাহতি চেয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা সম্প্রতি নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন। বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন; তাঁরা যাতে অবিলম্বে পদত্যাগ করে সরে যান, সে দাবি করেছে বিএনপি।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, এলজিআরডি ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ যেসব উপদেষ্টা রাজনৈতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিতর্কিত বক্তব্য রেখে চলেছেন তাঁদের পদত্যাগ দাবি করেছি। এঁদের সবাইকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এঁরা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চান। গণতন্ত্রের পথে সরাসরি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদে এঁরা থাকলে দেশে কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া নির্বাচনের ঘোষণা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত। সে সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। কেননা রোডম্যাপ না থাকার কারণে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। রোডম্যাপ ঘোষণা করলে মানুষের মধ্যে সন্দেহ থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে হবে। কেননা তাঁর অধীনে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে গত কয়েক দিনে রাজনীতিতে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এর পেছনে ছিল ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক গতকাল বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে বলেন, ‘এভাবে আলটিমেটাম দিয়ে, টাইমফ্রেম বেঁধে দিয়ে দেশ সামনের দিকে অগ্রসর করা সম্ভব হবে না। সবাই সহনশীল অবস্থানে আসুন। প্রত্যেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন।’ তিনি বলেন, ‘প্রফেসর ইউনূস সাহেব জাতির অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমাদের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ। যার যার জায়গা থেকে আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনাদের ব্যক্তিগত মান-অভিমান দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন ফিকে হতে দিতে পারে না। এখনো শহীদের রক্তের দাগ বাংলার রাজপথ থেকে মুছে যায়নি। এখনই ক্ষমতা নিয়ে এত হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া আমাদের জন্য সমীচীন নয়।’