বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান্টিক ছবি নির্মাণের কারিগর মতিন রহমান। মতিন রহমান চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। আজিজুর রহমানের সহকারী হিসেবে তিনি অশিক্ষিত (১৯৭৮), মাটির ঘর (১৯৭৯), ছুটির ঘণ্টা (১৯৮০) এবং মহানগর (১৯৮১) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে নির্মিত ‘লাল কাজল’-এ পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। এরপর নির্মাণ করেন চিৎকার, স্বর্গ নরক, স্নেহের বাঁধন, জীবনধারা। ১৯৮৯ সালে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের ইকবাল কাশ্মীরির একটি গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার আহমদ জামান চৌধুরীর লেখা কাহিনি নিয়ে রাঙ্গা ভাবী এবং ময়মনসিংহ গীতিকার লোককাহিনি অবলম্বনে বীরাঙ্গনা সখিনা। ১৯৯২ সালে পরিচালনা করেন অন্ধ বিশ্বাস। এই চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেন সালমান শাহ ও শাবনূর জুটিকে নিয়ে তোমাকে চাই (১৯৯৬), মন মানে না, বিয়ের ফুল (১৯৯৯), নারীর মন (২০০০), এ মন চায় যে (২০০০), মাটির ফুল (২০০৩) ও মহব্বত জিন্দাবাদ। ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন কমেডি ধাঁচের রং নাম্বার। ২০০৫ সালে নির্মাণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গল্প অবলম্বনে রাক্ষুসী। ২০০৮ সালে পরিচালনা করেন তোমাকেই খুঁজছি। ২০১৩ সালে তিনি নন্দিত সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত দুটি চলচ্চিত্র নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। বইটির নাম ‘হুমায়ূন আহমেদ-এর শেষ ও প্রথম চলচ্চিত্র।’ মতিন রহমানের লাল কাজল চলচ্চিত্রের নামকরণে ছবিটির গল্পকার চিত্রনাট্যকার অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের অবদান ছিল। ছবিটির স্লোগান ছিল- ‘দুধের রং সাদা, কাজলের রং কালো- লাল কাজল।’
এ ছবিটির জন্য শাবানা তাঁর অভিনয় জীবনে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। মতিন রহমানের আরেকটি পরিচয় হলো তিনি শখের অভিনেতা। বিভিন্ন সিনেমায় তিনি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি অভিনয় শুরু করেন ৭০ দশকে। আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অতিথি’ ছবিতে অভিনয় করেন একজন কাজীর চরিত্রে। ছবিতে শাবানা-আলমগীরের বিয়ে পড়ানোর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর নিজের পরিচালিত ‘স্নেহের বাঁধন’ ছবিতে কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। নিজের পরিচালিত রাক্ষুসীতে করেন পূর্ণিমার বাবা এবং ‘নারীর মন’ ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ ও শাকিলের শিক্ষকের চরিত্রে। চলচ্চিত্র নিয়ে বিশেষ গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এই নির্মাতা।
যার মাধ্যমে এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। কারণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান অর্জন করেন।
মতিন রহমান দীর্ঘ ২২ বছর ধরে রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। ১৯৫২ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার সান্তাহারে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।