জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবন সব সময়ই দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের (প্রতিবেশ পর্যটক) জন্য এক দর্শনীয় স্থান। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় ছয়বার রূপ বদলায় এ ম্যানগ্রোভ বনটি। বঙ্গোপসাগরের কোলে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের কটকার জামতলা ও কদমতলা সি-বিচে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত দেখার নয়নাভিরাম দৃশ্য। এসব প্রাণ-প্রকৃতির টানে প্রতিবেশ পর্যটক ছুটে আসে সুন্দরবনে। সুন্দরবনজুড়ে অধিকাংশ বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন র্নিবিঘ্ন করতে জুন থেকে এক টানা তিন মাস পর্যটক ও বনজীবীদের নিষিদ্ধ থাকে। তবে, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া, শরণখোলা, আলিবান্দাস লোকালয় সন্নিহিত বনে সারা বছরই পর্যটনের সুযোগ থাকলেও গোটা সুন্দরবনে ১ সেপ্টেম্বর থেকে একটানা ৯ মাসের পর্যটন মৌসুম। নয়নাভিরাম এ বনের প্রাণ-প্রকৃতির টানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের গড়ে দেড় লাখের বেশি প্রতিবেশ পর্যটক ছুটে আসে সুন্দরবনে। এর মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় ৮০ ভাগ প্রতিবেশ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকে। এখন যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় বাড়ছে প্রতিবেশ পর্যটকদের সংখ্যা।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, অক্সিজেনের অফুরন্ত ভান্ডার দেশের মোট সংরক্ষিত বনের ৫১ ভাগই হচ্ছে সুন্দরবন। ১৬৯ মিলিয়ন টন শোষণ ক্ষমতার প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সুন্দরবনে সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। রায়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়া হরিণ, কুমির, কিং কোবরা, ৩১৫ প্রজাতির পাখিসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। ম্যানগ্রোভ এ বনটির ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ এলাকাজুড়ে ৪৫০টি ছোট বড় নদী খাল ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ রামসার জলাভূমি’ হিসেবে স্বীকৃত। বিশাল এ জলভাগে রয়েছে বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাওয়া ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কুমির, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপসহ ২১০ প্রজাতির মাছ। ভরপুর জীববৈচিত্র্যে কারণে প্রতিদিনই প্রতিবেশ পর্যটক ছুটে আসে সুন্দরবনে। বাগেরহাট-শরণখোলা আঞ্চলিক মহাসড়ক, মোংলার সফঙ্গ রেল সংযোগ ও পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে এখন সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র ৩ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। পদ্মা সেতু এবারের সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণে সময় ও দূরত্ব কমে আসায় পর্যটকদের ঢল সামাল দিতে খুলনা, মোংলা, শরণখোলা থেকে ট্যুর অপারেটররা কয়েক শ বিলাসবহুল লঞ্চ, ট্যুরিস্ট বোটসহ জলযানে প্রতিদিনই শত শত প্রতিবেশ পর্যটক ভ্রমণ করছে সুন্দরবনে। এ কারণে এখন সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজমে অপর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাইল করিম চৌধুরী জানান, গত মৌসুমের চেয়ে এবার সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় এখন মাত্র ৩ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুন্দরবনে আসা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেল বুকিংয়ের বিড়ম্বনা ছাড়াই পর্যটকরা স্বল্প সময়ে কম খরচে দিনের মধ্যেই সুন্দরবন ভ্রমণ করে গন্তব্যে ফিরতে পারবে। এসব কারণে ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে বন বিভাগের কাছ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আগাম অনুমতিপত্র নিচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক